চঞ্চলের কপাল খোলার জন্য বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে যে চিঠি লিখেছিলেন এ টি এম

প্রকাশিত: ১১:৫৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪
চঞ্চল চৌধুরী, এ টি এম শামসুজ্জামান ও খুশী এবং এ টি এম শামসুজ্জামানের হাতের লেখা সেই চিঠি

বিনোদন প্রতিবেদক

চলচ্চিত্র, টেলিভিশনের শক্তিমান অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামানকে হারানোর তিন বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০২১ সালের আজকের এই দিনে মারা যান তিনি। অভিনয়ে তিনি একাধিক প্রজন্মের আদর্শ, অনুপ্রেরণার উদাহরণ। একই দিনে মারা গেছেন আরেক কিংবদন্তি অভিনেতা গোলাম মোস্তফা।

এই অভিনেতাকে হারানোর ২১ বছর আজ। এ টি এম শামসুজ্জামানের সঙ্গে অনেক নাটকে কাজ করেছেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। প্রয়াণ দিনে কিংবদন্তি দুই অভিনেতাকে স্মরণ করে দীর্ঘ এক পোস্ট দিয়েছেন চঞ্চল। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক ছবি পোস্ট করে চঞ্চল লিখেছেন, ‘আজ বাংলাদেশের দুজন কিংবদন্তি অভিনেতার প্রয়াণ দিবস।

তাঁরা হলেন জনাব গোলাম মোস্তফা এবং জনাব এ টি এম শামসুজ্জামান। গভীর শ্রদ্ধা জানাই তাঁদের বিদেহী আত্মার প্রতি। গোলাম মোস্তফা সাহেবের সঙ্গ লাভ বা তাঁর সাথে অভিনয় করবার সৌভাগ্য আমার কখনো হয়নি। তবে ছোটবেলা থেকে ওনার অভিনয় এবং আবৃত্তির আমি একনিষ্ঠ ভক্’
 

চঞ্চল চৌধুরী লিখেছেন, ‘এ টি এম শামসুজ্জামানের সঙ্গে আমার অসংখ্য কাজ করার সুযোগ হয়েছে। সালাউদ্দিন লাভলু, বৃন্দাবন দাস, মাসুম রেজা, মোশাররফ করিম, শাহনাজ খুশী, আ খ ম হাসান, শামীম জামান, আমিসহ অনেকে একসঙ্গে অনেক নাটকে কাজ করেছি। আমাদের সবারই অসংখ্য ভালো লাগার এবং আনন্দের স্মৃতি রয়েছে এ টি এম ভাইয়ের সঙ্গে।’

নাটকের শুটিংয়ের সময়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে অভিনেতা লিখেছেন, ‘ভবের হাট’ নাটকের শুটিংয়ের সেটে, শটের মাঝখানে এ টি এম ভাই হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার কপালে কী হয়েছে চঞ্চল?’ আমি বললাম, ‘কোনো একটা কারণে আঘাত পাওয়ার পর থেকে টিউমারের মতো শক্ত কী একটা যেন হয়েছে! অনেক দিন হয়ে গেল, কমছে না।’ উনি বললেন, ‘সেকি! তোমার তো এখন কপাল খোলার সময়, কপালের যত্ন নাও।

আমার বন্ধু ডা. সেন, ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটের প্রধান। আমি একটা চিঠি লিখে দিচ্ছি সেন মহাশয়কে, তুমি তাড়াতাড়ি দেখা করো ওর সাথে। তিন-চার দিনের মধ্যে কপালটা ফাটিয়ে, জোড়া লাগিয়ে আবার আগের মতো ফ্রেশ কপাল বানিয়ে দেবে।’ 

চঞ্চল লিখেছেন, “যথারীতি এ টি এম ভাই ডা. সেন স্যারকে একটা চিঠি লিখে দিলেন। আমি দেখা করলাম। সেন স্যার হলেন বিখ্যাত ডা. সামন্ত লাল সেন। যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সেন স্যার আমাকে দেখেই চিনে ফেললেন। তারপর এ টি এম ভাইয়ের লেখা চিঠিটা পড়ে হাসতে লাগলেন। চিঠির লেখাগুলো ছিল… ‘সেন, প্রীতস্তি কুশল রইলো। চঞ্চলকে পাঠালাম। ও ইদানীং ওর অভিনয়ে আমাদের সবাইকে চঞ্চল করে তুলেছে। কপাল জোর কদমে দৌড়চ্ছে। সেই কপালে কী যেন হয়েছে। দেখে যদি মনে করেন ফাটিয়ে দেবেন। একবার ফাটলে আর ধরে কে ওকে। ভালো আছেন। ভালো থাকবেন। বৌদিকে নমস্কার। বাকী পরিবারের সবাইকে ভালবাসা । এ টি এম শমসুজ্জামান, ২৯ শে শ্রাবণ, ১৪১৩ বাংলা।’ তারপর সত্যিই আমার কপালটা ফাটিয়ে দিলেন ডা. সামন্ত লাল সেন।”

এ টি এম শামসুজ্জামানকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন চঞ্চল। সে সময়ের কথা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, “এ টি এম ভাই যখন খুব অসুস্থ হয়ে পিজি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, একদিন বৃন্দাবনদা, খুশী আর আমি ওনাকে দেখতে গেলাম। আমাদেরকে দেখে উনি আনন্দে কেঁদে ফেললেন। বললেন, ‘আল্লার রহমতে, সকলের দোয়ায় আমি সুস্থ হইয়া যামু। আবার অভিনয় করমু, তোমরা রেডি হও।’ আমরা সত্যিই রেডি ছিলাম ওনার অভিনয়ে ফেরার আশায়, রেডি ছিলাম না ওনার চিরবিদায় নেবার সংবাদ শোনার জন্য। হাসপাতালে ওনার সাথে সেই শেষ দেখা। শেষের ছবিটা আমাদের শেষ স্মৃতি।”

সব শেষে তিনি লিখেছেন, ‘ডা. সেন স্যারকে লেখা তাঁর হাতের লেখা চিঠিটা আগলে রেখেছি অনেক যতনে। পরপারে শান্তিতে থাকুন হে কিংবদন্তি।’