সন্মানের জায়গাটুকু থাকুক শিক্ষকের জন্যে

প্রকাশিত: ৮:৩০ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৬, ২০২৪

শিবব্রত চক্রবর্ত্তী
*****************************************
আমাদের ব্যাক্তিগত জীবন,সমাজ জীবন, রাজনৈতিক জীবন—এককথায় জীবনের সর্বস্তরে একজন শিক্ষকের কতটুকু প্রভাব রয়েছে তা বুঝাতে গিয়ে প্রখ্যাত আমেরিকান ঐতিহাসিক হেনরি এডামস্ বলেছেন”,A Teacher affects etimity,He can never tell when his influence stops”অর্থ্যাৎ:” একজন শিক্ষকের প্রভাব চিরকাল ধরে চলতে থাকে। শিক্ষক নিজেও বলতে পারেননা কখন তার এই প্রভাব শেষ হবে।”এমনই হচ্ছেন আমাদের শিক্ষক।আর এই শিক্ষক সমাজের প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা জানানোর দিন শুধু শিক্ষক দিবসেই নয় এটা সারা বছর ধরেই বহমান বলে মনে করি।
এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবস সারা বিশ্বেই ভাবগম্ভীর পরিবেশে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে পালিত হয়েছে।এই দিনটিতে আমি আমার সকল শিক্ষকদের বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। সেইসাথে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের সকল দেশের সর্বস্তরের শিক্ষক শিক্ষিকা দের অন্তস্হল থেকে গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি ও তাদের সর্বাঙ্গীন সুখ সমৃদ্ধি প্রার্থণা করছি। বিশেষ ভাবে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি আমার নিজের শিক্ষক দের যারা আমাকে সেই গ্রাম্য স্কুল , প্রাথমিক স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদান করে আমাকে জীবন পথে চলতে সাহায্য করে আমাকে বিশেষ ভাবে ঋণী করেছেন।
সবাই জানি শিক্ষক হচ্ছেন আমাদের জীবন গড়ার কারিগর। শিক্ষা নীতির অনুচ্ছেদে বলা আছে, শিক্ষক আমাদের কে এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে দেন ,জ্ঞান দিয়ে মুড়িয়ে দেন সেই সঙ্গে গড়ে তোলেন জাতীর ভবিষ্যত।
আমরা শিক্ষককে “গুরু “মানি। বাংলা ব্যাকরণ রীতি অনুযায়ী “গু” মানে অন্ধকার, মূর্খতা,অজ্ঞনতা। আর “রু ” হচ্ছে আলো।যিনি আমাদের অন্ধকার, মূর্খতা ও অজ্ঞনতা থেকে আলোতে নিয়ে যান তিনিই গুরু বা শিক্ষক।তাইতো শিক্ষক আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র, আমাদের অতি প্রিয়জন ও ভরসার কেন্দ্রবিন্দু। একজন শিক্ষককে ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকরা কেমন ভালোবাসে এবং শ্রদ্ধা করেন যখন দেখা যায় প্রিয় শিক্ষক এক প্রতিষ্ঠানে থাকার পর যখন অন্য প্রতিষ্ঠানে বদলী হয়ে যান,তখন ছাত্রছাত্রী অভিভাবকরা চোখের জলকে বাধ মানাতে পারেননা।ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকদের চোখের জলে প্রমান করে একজন শিক্ষক ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকের হৃদয়ে কতটুকু জায়গা জুড়ে বসবাস করেছিলেন।এমন শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রতি আমাদের স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই ভক্তি শ্রদ্ধা জেগে উঠে।এরা আমাদের সবার প্রনম্য। লেখক দ্বীজেন্দ্র নাথ বলেছিলেন “মানুষ স্বভাবতই দ্বিজ” অর্থাৎ মানুষ দুবার জন্মগ্রহণ করে। একবার তার পিতামাতা জন্ম দেন । দ্বিতীয় বার শিক্ষক তাকে জ্ঞানের আলোকে আলোকিত করে পৃথিবীতে নতুন পরিচয়ে পরিচিত করেন।
তাই আমরা জন্মগ্রহণ করে মা বাবা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি।ভুমিষ্ট হওয়ার পর থেকেই শিশুটির যত্ন আত্তি,, দেখাশোনা ধীরে ধীরে জগতের পরিচয় মা বাবাই করে থাকেন। এর পরের পর্যায়ে শিশুটির ভার নেন শিক্ষক।এই শিক্ষক ই শিশুটিকে নানা ভাবে শিক্ষা দিয়ে তাকে জীবন পথে সঠিক ভাবে এগিয়ে যাবার পথটি দেখিয়ে দেন । তাইতো মনিষীরা বলেন,”মা বাবা জন্ম দেন ,আর শিক্ষক জীবন দেন”। দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডার তার এক উক্তিতে শিক্ষক সম্পর্কে বলেছিলেন,”I am indebted to my father for living,But to my teacher for living well” অর্থাৎ:আমি বেঁচে থাকার জন্য আমার পিতার কাছে ঋণী কিন্তু ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমি আমার শিক্ষকের কাছে ঋণী। শিক্ষকদের এই ঋণ কখনো শোধ হবার নয়। এই ঋণের বদলে শিক্ষক ও কোন শিক্ষার্থীর কাছে কোন প্রতিদান চাননা।
এভাবেই কিছু পাওয়ার আশা না করেই শিক্ষক মনের আনন্দে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা দিয়ে চলেছেন দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর। আমাদের উচিত শিক্ষকদের প্রাপ্য সম্মান টুকু দেয়া তাদের কাজের প্রশংসা করা।
ভুলে গেলে চলবে না, যে দেশে শিক্ষকদের সন্মান নেই সে দেশে উন্নতি নেই।আমেরিকায় শিক্ষকদের ভিআইপি মর্যাদা দেয়া হয়। ইংল্যান্ডে সর্বস্তরের শিক্ষকদের অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখা হয়।জাপানে বাসে,ট্রেনে,জাহাজে শিক্ষকদের জন্য সিট ছেড়ে দেয়া হয়। সেখানে কোনো কোনো দোকান বা শপিং মলে শিক্ষকদের জন্য ডিসকাউন্ট দেয়া হয়।
আমাদের দেশে যদি আমরা চেষ্টা করি নানাভাবে শিক্ষকদের সন্মান জানানো যায়। শিক্ষক দিবস হিসেবে অনুষ্ঠানগুলো সরকারী ব্যবস্থাপনার আয়োজনের সাথে সাথে বিভিন্ন ক্লাব, সামাজিক সংস্থা, বিভিন্ন এলাকার জনগণ একত্রে মিলে শিক্ষক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যায়। সেখানে জনগণের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের সম্পর্কে দুচারটে ভালো কথা এবং কিছু উপহার সামগ্রী তাদের হাতে তুলে দিলে তারা খুবই আনন্দিত হবেন এবং পাঠদান কাজে আরো উৎসাহিত হবেন।পাড়া বা এলাকাতে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে এলাকার শিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে। সেখানে তাদের সামনের সারিতে বসার ব্যবস্থা করলে এবং তাদের মধ্যে থেকে প্রধান অতিথি করলে তারা সম্মানিত বোধ করবেন।
কিন্তু দুঃখের বিষয়,আজ দেশে শিক্ষকরা পদে পদে লাঞ্ছিত হচ্ছেন।পথে পথে নিগৃহীত হচ্ছেন। কুলাঙ্গার শিক্ষার্থীদের দ্বারা মারধরের মত ঘটনার স্বীকার হচ্ছেন। দেশবাসীর উচিত এই জাতীয় ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করা।ঘৃণ্য অপরাধীদের আইনানুযায়ী বিচার করে অবিলম্বে কঠিন শাস্তি দেয়া হোক যাতে ভবিষ্যতে আর এভাবে শিক্ষক হয়রানি করার সাহস না পায়।জয় হোক শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের।। (shovon457@gmail.com)