কুমিল্লার তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনাকারী গ্রেপ্তার।

প্রকাশিত: ৭:২২ পূর্বাহ্ণ, মে ৮, ২০২৩

 নিজস্ব প্রতিনিধি : র‌্যাবের একটি চৌকশ টিম কুমিল্লার তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনাকারী বিতর্কিত আওয়ামীলীগ নেতা ও তিনটি হত্যাসহ ৯ মামলার আসামী শাহীনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদার সহ মোট তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছেন। এই সোহেল শিকদার তিতাস উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন এবং বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এলাকায় সে মূর্তিমান আতঙ্ক পরিচিত। সোহেল শিকদারের সাথে গ্রেপ্তার হয়েছেন দুইটি হত্যাসহ তিন মামলার আসামী মোঃ ইসমাইল হোসেন ও একটি হত্যাসহ ১০ মামলার আসামী মোঃ শাহ আলম। ৬ মে দিনে ও রাতে চট্্রগামের আগ্রাবাদ, ঢাকার রায়েরবাগ ও মিরপুরের কালশী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। বোরকা পরে হত্যা মিশনে অংশ নিলেও হত্যার পর কিছু দুর গিয়ে বোরকা ফেলে দেওয়ায় সিসি ফুটেজে ঘাতকের অবয়ব ধরা পড়ে। র‌্যাব সে সব ফুটেজ বিশ্লেষন করে নিশ্চিত হয়ে মনাইরকান্দির আক্তার হোসেন শিকদারের ছেলে শাহীনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদার(৪০), জিয়ারকান্দির খুরশিদ মিয়ার ছেলে মো: ইসমাইল হোসেন (৩৬) ও দাউদকান্দির গোপচর গ্রামের মৃত বজলুর রহমানের ছেলে মো: শাহআলম ওরফে পা কাটা আলম (৩৬) কে গ্রেপ্তার করে।
জামাল হোসেন হত্যা মামলার ৯ আসামীর মধ্যে তিন জনকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করতে পারলেও এক নম্বর আসামী তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি গ্রামের মো: সুজন ও ২ নম্বর আসামী আরিফ হোসেন নেপালে, ৫ নম্বর আসামী বাদল দুবাইতে, ৬ নম্বর আসামী শাকিল ভারতে, ৮ নম্বর আসামী অলি হাসান সৌদি আরবে পালিয়ে গেছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে। মামলার ৯ নম্বর আসামী কালা মনির এখনো দেশেই আত্নগোপনে রয়েছে।
জামাল হোসেন হত্যা মামলার বেশির ভাগ আসামিই এর আগে কুমিল্লার গৌরীপুর বাজারে খুন হওয়া জিয়ারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মনির হোসাইন হত্যা মামলার আসামি।
উল্লেখ্য যে, গত ৩০ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে দাউদকান্দির গৌরীপুর পশ্চিম বাজার ঈদগাহ এলাকার মসজিদ গলিতে তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক জামাল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে বোরকা পরে আসা দুর্বৃত্তরা।
র‌্যাব জানায়, এ দিন রাত আনুমানিক সোয়া ৯টায় ৩ জন বোরকা পরিহিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানাধীন গৌরীপুর পশ্চিম বাজার সংলগ্ন মসজিদের পাশে একটি দোকানের সামনে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় জামাল হোসেনের উপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এই সময়ে বোরকা পরিহিত হামলাকারীরা জামালের উপর এলোপাথাড়ি ভাবে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এরপর ভিকটিম জামাল গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। আহত জামালকে ঘটনাস্থলের উপস্থিত লোকজন গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। পরবর্তীতে পরিবার আরো নিশ্চিতের জন্য ভিকটিম জামালকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকও তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হত্যাকান্ডের এই ঘটনাটি দেশব্যাপী বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। হত্যাকান্ডের পরপরই র‌্যাব-১১ ও র‌্যাব সদর দপ্তরের একাধিক গোয়েন্দা দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং আসামীদের সনাক্তকরণের নিমিত্তে কাজ শুরু করে।
র‌্যাব জানায়, ঘটনাস্থল ও ঘটনাস্থলের আশেপাশে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, বোরকা পরিহিত ৩ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী স্বাভাবিক পথচারীর বেশে ঘটনাস্থলে আসে। এসময়ে নিহত জামাল এজাহারনামীয় ৩নম্বর আসামী মোঃ ইসমাইল (৩৬) ও এলাকার পূর্ব পরিচিত কয়েক জন ব্যক্তির সাথে একটি দোকানের সামনে অবস্থান করছিল। বোরকা পরিহিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে অতর্কিত নিহত জামালকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এসময় ভিকটিম জামাল এর সাথে বোরকা পরিহিত একজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর ধস্তাধস্তি হয় এবং নিহত জামাল তাকে ঝাপটে ধরে ফেলে। তখন সাথে থাকা বোরকা পরিহিত অপর একজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী জামালকে লাথি দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় এবং বোরকা পরিহিত অপর ব্যক্তি তার সাথে থাকা পিস্তল দিয়ে নিহত জামালকে খুব কাছ থেকে মাথায় ও বুকে গুলি করে দ্রুত ঐ স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় অন্য আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, আসামীরা দৌড়ে পালানোর সময় একজনের বোরকার মুখের আবরণ খুলে যায় ও একজনের সাথে আরেকজনের ধাক্কা লেগে একজন আসামীর হাত থেকে তার সাথে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রটি মাঠিতে পড়ে যায়। পরবর্তীতে অস্ত্র কুড়িয়ে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
র‌্যাব-১১ অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, তথ্য উপাত্ত, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, মাঠ পর্যায় হতে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ০৬ মে দিনে ও রাতে অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম জেলার আগ্রাবাদ এলাকা, ঢাকা জেলার রায়েরবাগ এলাকা ও কালশী, মিরপুর এলাকা হতে উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারনামীয় মনাইরকান্দির আক্তার হোসেন শিকদারের ছেলে শাহীনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদার(৪০), জিয়ারকান্দির খুরশিদ মিয়ার ছেলে মো: ইসমাইল হোসেন (৩৬) ও দাউদকান্দির ঘোপচর গ্রামের মৃত বজলুর রহমানের ছেলে মো: শাহআলম ওরফে পা কাটা আলম (৩৬)কে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
র‌্যাব-১১ অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা আরো জানান, এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভিকটিম জামালের হত্যার বিষয়ে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। মূলত এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যাকান্ডটি সংঘঠিত হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ ইসমাইল (৩৬) এর বিরুদ্ধে ০২ টি হত্যা মামলাসহ মোট ৩ টি মামলা, শাহীনুল ইসলাম @সোহেল শিকদার (৪৬) এর বিরুদ্ধে ৩ টি হত্যা মামলাসহ মোট ৯ টি মামলা ও মোঃ শাহ আলম (৩৮) এর বিরুদ্ধে ১ টি হত্যা মামলাসহ মোট ১০ টি মামলা রয়েছে। তিনি আরো জানান, এই মামলার এজাহারনামীয় ০৯ জন আসামীর মধ্যে আমরা ৩ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই এবং এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামী সুজন নেপালে, ২ নম্বর আসামী আরিফ নেপালে, ৫ নম্বর আসামী বাদল দুবাইতে, ৬ নম্বর আসামী শাকিল ভারতে, ০৮ নম্বর আসামী অলি হাসান সৌদি আরবে পলায়ন করেছে ও ৯ নম্বর আসামী কালা মনির পলাতক অবস্থায় আত্নগোপনে রয়েছে। বিদেশে অবস্থানরত আসামীদের দেশে ফেরাতে এবং হত্যার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে  র‌্যাব-১১ এর প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে।
র‌্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানায় হস্তান্তর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
উল্লেখ্য, নিহতের স্ত্রী পপি আক্তারের করা মামলার ১৭ আসামির মধ্যে রয়েছেন- তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি গ্রামের মো. সুজন, আরিফ হোসেন, ইসমাইল হোসেন, মনাইরকান্দি গ্রামের শাহিনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদার, জিয়ারকান্দি গ্রামের বাদল, শাকিল, দাউদকান্দির গোপচর গ্রামের শাহ আলম, তিতাসের জিয়ারকান্দি গ্রামের অলি হাসান ও কালা মনির।