ফেনীর পরশুরাম ইসলামী ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধায়ক ইকরামুল চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির যত অভিযোগ।

প্রকাশিত: ৭:২৮ পূর্বাহ্ণ, জুন ২০, ২০২৩

 

শিবব্রত(বিশেষ প্রতিনিধি)
***************************************
ফেনীর পরশুরাম ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরশুরাম উপজেলার ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক এবং শিক্ষক ইকরামুল চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইসলামী ফাউন্ডেশনের শিক্ষা কেন্দ্র গুলোতে দূর্নীতি ও হয়রানির শিকার হয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন পরশুরাম ইসলামী ফাউন্ডেশনের সাবেক শিক্ষক মোঃ এমাম হোসেন ওরফে আমির হোসেন ইমাম।

ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে পরশুরাম উপজেলার কেতরাঙ্গা কেন্দ্রের শিক্ষক ছিলেন। তিনি ওই কেন্দ্রে যোগদান করার পর থেকে তত্ত্বাবধায়ক ইকরামুল চৌধুরী তার কাছে ত্রিশ হাজার টাকা দাবী করে বলেন , তিনি যদি এই চাকুরিতে বহাল থাকতে চান তাহলে ইকরাম চৌধুরী কে এই টাকা দিতে হবে। শিক্ষক এমাম হোসেন ওই দাবি কৃত টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে বিভিন্ন ভাবে হেনস্থা করে ইসলামী ফাউন্ডেশনের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের কাছে এমাম হোসেনের বিরুদ্ধে ভুল বুঝিয়ে তাকে কেতরাঙা শিক্ষা কেন্দ্র থেকে চাকুরী চ্যূত করেন। এব্যাপারে সাবেক শিক্ষক এমাম হোসেন বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়ে ও কোন প্রকার প্রতিকার পাননি।।
এমাম হোসেনের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, পরশুরাম উপজেলায় ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত ১১২ টি কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ৯৫ টা কেন্দ্রে যথারীতি কার্যক্রম থাকলেও বাকী ১৭ টি কেন্দ্রে নিয়মিত পাঠদান সহ কার্যক্রমের কোন অস্তিত্ব নেই। শিক্ষক ও নেই। অধিকাংশ কেন্দ্রে নেই কোন সাইনবোর্ড । কিন্তু কাগজেকলমে ওই কেন্দ্র গুলোর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে দেখিয়ে প্রতি মাসের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা খরচ উঠিয়ে নিচ্ছেন ইকরামুল চৌধুরী।
ইকরামুল চৌধুরী ইসলামী ফাউন্ডেশনের অধীনে ২০১৮সালে দক্ষিণ কাউতলী চৌধুরী বাড়ী জামে মসজিদ কেন্দ্রের জন্য শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলে ও এই পযন্ত তিনি একদিন ও ওই কেন্দ্রে পাঠদান করেননি,যা সরজমিনে গিয়ে এলাকাবাসী থেকে জানা যায়। তিনি পরশুরামে না থেকে পরিবার নিয়ে ফেনীতে থাকেন বলে ও জানায় ফাউন্ডেশন কেন্দ্রের শিক্ষকরা। ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত কেন্দ্রের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, ইকরামুল চৌধুরী তার নির্দিষ্ট ডিউটি না করে নিজেকে ইসলামী ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কর্মকর্তা দাবী করে ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত পরশুরাম উপজেলার অন্যান্য কেন্দ্র গুলোতে ভিজিটের নাম করে ওইসব কেন্দ্রের শিক্ষকদের বিভিন্ন অনিয়ম দেখিয়ে তাদের কাছে অনৈতিক ভাবে টাকা দাবী সহ চাকুরী চ্যূত করার হুমকি দেন ।
এদিকে চিথলিয়া কেন্দ্রের সাবেক শিক্ষিকা সুরাইয়া ইয়াসমিন লিখিত অভিযোগে বলেন, ইকরামুল চৌধুরী তাকে চাকুরী স্হায়ীকরনের আশ্বাস দিয়ে বলেছেন যে “আপনার একাউন্টে বেতন পেতে হলে আপনার একটি সাক্ষরিত চেক ব্যাংকে জমা দিতে হবে। তিনি বলেন,এটা শুনে আমি সরল বিশ্বাসে সোনালী ব্যাংক পরশুরাম শাখা বরাবর একটি চেক ইকরামুল চৌধুরীকে দেই। পরবর্তী তে ব্যাংকেে ৩৬০০০(ছত্রিশ হাজার) টাকা জমা হলে ওই টাকা ইকরামুল চৌধুরী তুলে নিয়ে যান। এক প্রশ্নের জবাবে ইয়াসমিন এই প্রতিবেদককে বলেন, পরে তার কাছে ওই টাকা ফেরত চাইলে ইকরামুল চৌধুরী ওই টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেন। ইয়াসমিন ক্ষোভের সাথে বলেন, তিনি এসব অনৈতিক কাজ মেনে নিতে না পেরে চিথলিয়া কেন্দ্র থেকে ইস্তফা দেন। তার কাছে চেকের মুড়ি কপিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যংক থেকে ইকরামুল চৌধুরীর সাক্ষরিত কপি সংগ্রহ করেছেন বলে জানান।
অন্য এক সুত্রে জানা যায়, ইসলামী ফাউন্ডেশনের অধীনে যেসব কেন্দ্রগুলোতে কাযক্র্ম নেই সেসব কেন্দ্রে কাগজপত্রে শিক্ষক দেখিয়ে সেইসব শিক্ষকদের গত ৫ মাসের বেতন চলিত মাসে অনলাইনে ব্যাংকিকের মাধ্যমে একাউন্টে জমা হলে ইকরামুল চৌধুরী ওইসব বেতন ভাতা তুলে নিয়েছেন। এব্যাপারে ইকরামুল হক চৌধুরীর কাছে জানত চাইলে তিনি এই ব্যপারে জানাতে ইচ্ছুক নন বলে জানান। এক প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কেন্দ্র শিক্ষক জানান, বিভিন্ন কেন্দ্র কাগজে কলমে থাকলেও মূলত কোন কার্যক্রম নেই। অনেক শিক্ষক এলাকাতে ও নেই।তারা অনেকেই ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থানে চাকুরী করেন।তাদের কে কর্মরত দেখিয়ে সেইসব শিক্ষকের ব্যাংক চেকবই ওইসব কেন্দ্রের শিক্ষকদের থেকে অগ্রীম সাক্ষর করিয়ে ইকরামুল তার নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বাউর পাথর(১)বাউর পাথর (২), উঃ কোলাপাড়া, পরশুরাম মডেল থানা মসজিদ, দক্ষিণ কাউতলী,(১), দক্ষিণ কাউতলী (২),নোয়াপুর আলতাফ আলী মসজিদ,মধ্যম চন্দনা,জমিয়ার গাও,খোন্দকিয়া কাচারী,দুবলাচাঁদ, উঃ শালধর,পুর্ব অনন্তপুর, এবং চিথলিয়া মোল্লাবাড়ী কাচারী কেন্দ্রগুলোতে বর্তমানে সক্রিয় কোন কার্যক্রম নেই।এইসব কেন্দ্রের অনেক শিক্ষক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন, আবার কিছু শিক্ষক স্হায়ীভাবে ঢাকাতে চাকুরী করেন। এইসব কেন্দ্রে গুলোতে নতুন শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে বা কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম বাদ না দিয়ে এখনো কাগজেকলমে দেখানো হচ্ছে বলে অনুসন্ধানে জানা যায়‌। ইকরামুল হক চৌধুরী রাজনৈতিক ভাবে বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে তার শ্বশুর,শ্যালক,শ্যালকের বৌ সহ একই পরিবারের কয়েকজন কে ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত কেন্দ্রে নিয়োগ পাইয়ে দিয়েছেন । তারাও কেন্দ্রে নিয়মিত থাকেননা বলে জানা যায়।
এদিকে ইকরামুল হক চৌধুরীর শ্বশুর সলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মনছুর মোল্লা রয়েছেন ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত চিথলিয়া ইউনিয়নে অবস্হিত কেন্দ্রেগুলোর সুপারভাইজারের দায়িত্বে। ফাউন্ডেশনের নিয়মানুযায়ী প্রত্যেক ইউনিয়নে কেন্দ্রের সুপারভাইজরের দায়িত্ব প্রাপ্ত কে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে একটি রিসোর্স সেন্টার চালু করতে হয়। কিন্তু মনছুর মোল্লা চিথলিয়া তে রিসোর্স সেন্টার চালু না করে তার কর্মস্হল পরশুরাম পৌরসভাধীন সলিয়া মাদরাসাতে রিসোর্স সেন্টার চালু আছে বলে দাবী করেন।
অন্য এক সুত্রে জানা যায় পরশুরাম ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত কেন্দ্র গুলোর দায়িত্বে বাইরে থেকে কোন ফিল্ড সুপারভাইজার বা সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তা আসলে ইকরামুল হক চৌধুরী তাদের কে বিভিন্ন ভাবে হেনস্থা করে তার নিজের কতৃত্ব বহাল রাখেন।
এই প্রেক্ষিতে ইসলামী ফাউন্ডেশনের অধীনে কর্মরত ফেনী ডেপুটি ডিরেক্টর অফিস সূত্র জানায়, অনেক দিন থেকেই পরশুরাম উপজেলায় অবস্থিত ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত কেন্দ্র গুলো নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ আসছে।আমরা অতিসত্বর এটার ব্যবস্হা নিব।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা শমসাদ বেগম বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।