বেসিক ব্যাংকের আর্থিক কেলেঙ্কারির মুল হোতা বাচ্চুসহ ৭৩ জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিতে চায় দুদক।

প্রকাশিত: ১১:৩৫ অপরাহ্ণ, জুন ২৩, ২০২৩

বিশেষ প্রতিনিধি : বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু কোথায় আছেন জানে না কেউ। তিনি দেশে না বিদেশে তার কোনও সুনির্দিষ্ট বা সুস্পষ্ট তথ্য নেই। তবে অবস্থান না জানলেও বাচ্চুর ‘বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে’ চায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কর্মকর্তারা জানান, বাচ্চু যাতে পালাতে না পারেন সে জন্য সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। গোয়েন্দারাও তৎপর হয়ে উঠেছেন। এছাড়াও আদালত থেকে এরইমধ্যে তার বিদেশ যাত্রায় ৬০ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের বহিরাগমন শাখাসহ (ইমিগ্রেশন শাখা) সব বন্দর কর্তৃপক্ষকে।

এছাড়া বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় চার্জশিটভুক্ত ১৪৭ আসামির মধ্যে ৭৩ জনকে চিহ্নিত করে তাদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতেও কাজ করার দাবি করছে দুদক।

গত ২০ জুন দুদকের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারির তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোরশেদ আলম ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। বিচারক আসাদুজ্জামান পরদিন (২১ জুন) এক আদেশে বাচ্চুর বিদেশ যাত্রায় ৬০ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেন।

দুদকের পরিচালক মোহাম্মদ মোরশেদ আলম আদালতে দেওয়া আবেদনে বলেন, ‘বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের ঋণ গ্রহীতা, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাসহ সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতিসহ ব্যাংকটির প্রায় ২ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং আত্মসাতে সহায়তার অপরাধে মোট ৫৯টি মামলা রয়েছে।’

আবেদনে আরও বলা হয়, ‘আসামি শেখ আবদুল হাই বিদেশে পালিয়ে গেলে মামলার সুষ্ঠু তদন্তে বিঘ্ন হবে। তিনি দেশত্যাগ করে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, যা তদন্তকারী কর্মকর্তা গোপন সূত্রে জানতে পেরেছেন।’ তবে বর্তমানে তার অবস্থান কোথায়- দুদকের আবেদনে তা উল্লেখ করা হয়নি।

দুদক কর্মকর্তার আবেদন পর্যালোচনা করে আদালত তার আদেশে বলেন, দুদকের আইনজীবীর বক্তব্য ও মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আসামি বিদেশে পালিয়ে গেলে মামলার কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তার দাখিল করা দরখাস্ত, মামলার নথি ও অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় আবেদনটি মঞ্জুর করা হলো। একইসঙ্গে আদেশ প্রদানের তারিখ (২১ জুন) থেকে ৬০ দিনের জন্য (আবদুল হাই বাচ্চুর) বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো।

দুদকের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, শেখ আবদুল হাই বাচ্চু দেশেই আছেন। এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত। কারণ ইমিগ্রেশনের সব শেষ তথ্য নিয়ে দুদকের গোয়েন্দারা জেনেছেন, আবদুল হাই বাচ্চু সর্বশেষ দুবাই যান গত ৫ এপ্রিল। সেখান থেকে তিনি কানাডায় যান। কানাডা থেকে দেশে ফিরে আসেন গত ৮ জুন। ১২ জুন দুদকের দায়ের করা ৫৯টি মামলার মধ্যে ৫৮ মামলায় অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুদক। এরপর বৈধ পথে তার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কোনও তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিংবা সংস্থার কাছে নেই। যে কারণে দুদক তার বিদেশ যাত্রা ঠেকাতে আদালতের আশ্রয় নিয়েছে।

যে তিনটি মামলায় আদালত থেকে বাচ্চুর ৬০ দিনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় সেগুলো হচ্ছে— মেট্রো বিশেষ মামলা (নম্বর- ১৪৬/২০২২),  দুর্নীতি দমন কমিশন জিআর (নম্বর- ৬২৩/২০১৫), পল্টন থানার মামলা {নম্বর-৫৫ (৯) ২০১৫}।

শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর গ্রেফতার কিংবা বিদেশ পালিয়ে যাওয়া ঠেকানোর বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘বাচ্চুকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে দুদক তার কার্যক্রম সর্বাত্মকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তিনি নিজে থেকে আদালতে গিয়ে বিচারের মুখোমুখি হলে গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হবেন।’