বাংলাদেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ: ফ্লুইড-স্যালাইন সংকটের আশঙ্কা করছে দেশের সব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

প্রকাশিত: ৯:৫৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৭, ২০২৩

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ফ্লুইড-স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে, ফ্লুইড-স্যালাইন সংকটে পড়তে পারে হাসপাতালগুলো। এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ওষুধ ব্যাবসায়ীরা।

ডেঙ্গু রোগীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট। বিশেষত আইভি(ইন্টার ভেনাস) স্যালাইন। বাংলাদেশে যে হারে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে হাসপাতালগুলোতে স্যালাইন সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ওষুধের দোকান মালিকরা।

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, মাতুয়াইল শিশ মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এসব হাসপাতালের রোগীরাও স্যালাইন সংকটের কথা জানিয়েছেন।

রোগীরা আশঙ্কা করছেন, সরকারি খরচে দেয়া আইভি ফ্লুইড সরবরাহ যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে বাজারেও স্যালাইন সংকট দেখা দিতে পারে।

সারাদেশে সরকারি হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং সদর হাসপাতালগুলোতে ওষুধ ও স্যালাইন সরবরাহ করে সরকারি মালিকানার এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। ফ্লুইড স্যালাইনের নিজস্ব উৎপাদন না থাকায়, বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি থেকে কিনে হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ বিষয়ে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির বলেন, “স্যালাইন তো আমরা উৎপাদন করি না। বেসরকারি কোম্পানিগুলো থেকে কিনতে হয়। আমরা আবার খুচরা মূল্যে স্যালাইন বা ওষুধ কিনি না। আর কোম্পানিগুলো রাতারাতি এত চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। পারলেও প্রচলিত দামে পাওয়া যাবে না।”

ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের কারণে গড়ে কী পরিমাণ ফ্লুইডের চাহিদা বেড়েছে; এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, “গত বছর ৬০ লাখ ব্যাগ স্যালাইনের চাহিদা ছিলো। এর মধ্যে ৫৯ লাখ ৩৭ হাজার ব্যাগ দিতে পেরেছি। এখন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ১০-১২ গুণ বেশি ফ্লুইড লাগছে।”

তিনি আরো বলেন, “এখন যে হারে ডেঙ্গুরোগী বাড়ছে, তাতে ফ্লুইড স্যালাইন সংকট প্রকট হচ্ছে।এটি সামাল দেয়া একটু কঠিন হবে। ডেক্সট্রোজ ৫ শতাংশ ও সোডিয়াম ক্লোরাইড দশমিক ৯ শতাংশের এক ব্যাগ (১০০০ মিলিলিটার) স্যালাইন ৮৭ টাকা এবং বেবি স্যালাইন ৬৩ টাকা রাখা হচ্ছে। এভাবে ৫০০ মিলিমিটার-সহ সব স্যালাইন স্বল্প দামে সব সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করা হচ্ছে।”

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, “মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা পাঁচশ’। বর্তমানে যে রোগী ভর্তি আছেন, তা ধারণ ক্ষমতার প্রায় ৩ গুণ বেশি। জুলাই মাসে ডেঙ্গুরোগীর চাপ বাড়ায় স্যালাইনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন ১০০০ থেকে ১২০০ আইভি ফ্লুইড প্রয়োজন হচ্ছে। বর্তমানে যে স্টক আছে, তাতে আগামী সপ্তাহেই ঘাটতি দেখা দেবে। তখন যদি আরো বেশি রোগী ভর্তি হয়, তাহলে স্যালাইন সংকটের আশঙ্কা রয়েছে।”

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, “ডেঙ্গু রোগীদের ৮০ শাতাংশের স্যালাইন লাগে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ায় স্যালাইনের চাহিদা বহুগুণ বেড়ে গেছে। আইভি ফ্লুইড-এর প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। ইডিসিএল-কে মাসে একবার স্যালাইনের চাহিদা দেয়া হতো। এখন প্রতি সপ্তাহে চাহিদা দিতে হচ্ছে।

১৫ হাজারের বেশি স্যালাইনের ব্যাগ এখনো মজুদ আছে। এগুলো দিয়ে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ চলবে। রোগী সংখ্যা বাড়তে থাকেলে আগামী ১০/১২ দিন পর স্যালাইন সংকটের আশঙ্কা রয়েছে।”

সরকারি মালিকানার ইডিসিএল সূত্র জানায়, ছয়টিবেসরকারি কোম্পানি থেকে স্যালাইন কিনে সরবরাহ করা হচ্ছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায়, যেসব হাসপাতালে স্যালাইনের চাহিদা বেশি, সেগুলোকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাজার থেকে কিনতে অনাপত্তি সনদ (এনওসি) দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, “ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ফ্লুইড স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে, এটা ঠিক। যাতে স্যালাইন সংকট না হয় এবং সরবরাহ কীভাবে বাড়ানো যায়, এবিষয়ে ইডিসিএল-এর সঙ্গে কথা বলবো আমরা। তবে স্যালাইন সংকটের আশঙ্কা থাকলেও আতঙ্কের কিছু নেই।”