কুমিল্লা থেকে কয়েকশত কোটি টাকা নিয়ে উধাও এমটিএফই।

প্রকাশিত: ১১:০১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৯, ২০২৩

বিশেষ প্রতিনিধি : রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিল হাজারো যুবক। আর এমনি একটি সুযোগ নিয়ে এসেছিল এমএলএম কোম্পানি এমটিএফই। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবে রূপ নিল না। হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেল অবৈধ অনলাইন গ্যাম্বলিং ক্রিপ্টো ট্রেডিং করা এমএলএম কোম্পানি এমটিএফই। প্রতারণায় জড়িয়ে সর্বস্বান্ত হলো দেশের লক্ষাধিক যুবক।

ধারণা করা হচ্ছে, এই কোম্পানির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা পাঁচার হয়েছে। একইসঙ্গে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে বিদেশি একটা অ্যাপের ফাঁদে অনলাইনে বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন হাজারও মানুষ। সারাদেশের ন্যায় কুমিল্লায় অনলাইন প্রতারক চক্র ‘এমটিএফই’ নামে এক বিদেশি অ্যাপের ফাঁদে পড়ে যুবক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েকশো মানুষ আর্থিকভাবে ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনলাইনভিত্তিক ওই চক্রটি তাদের কাছ থেকে কোটি টাকার বেশি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন চক্রটির ফাঁদেপড়া অনেকেই।

দুবাইভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম পঞ্জি মডেলে ব্যবসা করতো। ভারত ও বাংলাদেশ থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিনিয়োগকারী ছিল। তবে অধিকাংশই বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী।

চক্রটির ফাঁদে পরে জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলা হাজার হাজার বিনিয়োগকারী রয়েছে।

প্রতিটি অ্যাকাউন্টে ‘রেফার’ হিসাবে ব্যবহার করেছে প্রতারক চক্রের সদস্যদের হিসাব। এরপর গ্রাহকরা এই অ্যাপে ডলার ডিপোজিট করেন। কিছুদিন রীতিমতো লোভ জন্ম নেয় এরকম লভ্যাংশও দিয়েছেন। এরপরই হঠাৎ ফাঁদেপড়া সবাই দেখতে পান যে লাভের বদলে তার ব্যালেন্স শূন্য হয়ে গেছে। রাতারাতি ধনী হওয়ার লোভে পড়ে এভাবে জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় শতশত মানুষ প্রতারিত হয়েছেন।

শুক্রবার (১৮ আগস্ট) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন একাধিক বিনিয়োগকারী।

এমদাদুল হক নামে এক বিনিয়োগকারী জানান, আমাদের ব্রাহ্মণপাড়া থেকে প্রায় ৫০ কোটি বেশি টাকা বিনিয়োগ করেছে বলে আমার ধারণা। তবে লোভের কারণে ব্রাহ্মণপাড়া হাজার হাজার যুবক ক্ষতিগ্রস্ত।

ব্রাহ্মণপাড়ার ৩০ হাজার ডলার খোয়ানো কাজী আরিফুল ইসলাম বলেন, তিনি প্রায় ৭ মাস ধরে এই কোম্পানির সঙ্গে আছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশে সিইও পদমর্যাদার ব্যক্তি রয়েছেন তিনি এবং সিইও পদমর্যাদায় ব্রাহ্মণপাড়ার মোঃ সুমন মিয়া, নাজমুল হাসান, নেয়ামতুল্লাহসহ মোট চার জন রয়েছেন।

তিনি বলেন, একেকজন সিইও এর অধীনে রয়েছেন অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ জন।

কাজী আরিফুল ইসলাম নিজেও একজন সিইও উল্লেখ করে বলেন, সিইও দের কে ৩০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করলে এম্বাসেডর পদবি দেওয়া অফার করে। লোভে পড়ে গেছি, প্রতিদিন যে ইনকামটা আসতো আমি টাকা উঠাই নি।

তিনি আরও বলেন, এভাবেই শত শত যুবককে তার বিনিয়োগ অনুযায়ী লাভ দিতেছে এই কোম্পানি। যারা বিজনেস করার জন্য এসেছে। তারা জেনেশুনে এসেছে। তবে হঠাৎ করে কোম্পানিটি উধাও হয়ে যাবে তিনি তা বিশ্বাস করতে পারছেন না।

যদিও গত ১৫ দিন যাবত টেকনিক্যাল প্রব্লেম বলে এই কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের কমিশন বন্ধ রেখেছিল। এখানে যারা টাকা দিচ্ছিলেন তারা আর টাকা উঠাতে পারছিলেন না। বৃহস্পতিবার থেকে আর কোনও লেনদেন হচ্ছে না। শুক্রবার পুরোপুরিভাবে এমটিএফই তাদের সিস্টেম বন্ধ করে দিয়েছে।

২০ হাজার ডলার বিনিয়োগকারী মোঃ সুমন মিয়া জানান, আমি প্রায় ৭ মাস যাবৎ এই কোম্পানি সাথে যুক্ত আছি। আমার প্রায় ২২ লক্ষ টাকাও বেশি টাকা উধাও হয়ে গেছে। আসলে এখন কিছু বলার ভাষা নাই। আমি লোভে পড়ে গিয়েছিলাম। কোম্পানি থেকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখায় আমাকে। লোভ সামলাতে পারেনি। আজ আমি দেউলিয়া। বাংলাদেশের সিইও পদমর্যাদার ব্যক্তি রয়েছেন তিনি।