শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন

প্রকাশিত: ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২৩

০৪ জানুয়ারি ২০২৩

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গলে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।আবহাওয়া বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। কিন্তু এই এলাকা ছাড়া দেশের আর কোথাও শৈত্যপ্রবাহ নেই।

তবু কনকনে শীতের প্রকোপে বিপর্যস্ত জনজীবন। বিশেষ করে ঢাকায় মঙ্গলবার প্রায় সারা দিনই মানুষ শীতে ভুগেছে। অথচ এই শহরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি। সাধারণত ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা নেমে গেলে তা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।

বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। দিন ও রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন শীতার্ত মানুষ। বিকালে শীতের তীব্রতা বেড়ে তা সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকছে। শীতের কারণে ছিন্নমূল ও দিনমজুররা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। ঘন কুয়াশা, তীব্র শীত ও হিমশীতল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, প্রায় সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ঊর্ধ্বমুখী। একটি স্টেশন বাদে আর কোথাও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেই। তবু শীতের এই প্রকোপের কারণ হচ্ছে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসা। সাধারণত পার্থক্য যত কম থাকবে, শীতের অনুভূতি তত বেশি থাকবে। যেমন, ঢাকায় মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি। এখানে পার্থক্য ৫ ডিগ্রির মতো। আসলে, পার্থক্য ১০ ডিগ্রির নিচে যত নামবে, শীতের তীব্রতা তত বাড়বে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের (বিএমডি) মঙ্গলবার সন্ধ্যার সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী দেখা যায়, দেশের যেসব এলাকায় শীতের প্রকোপ বেশি, সেখানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে এসেছে। এই শীতের অনুভূতি আরও প্রভাবিত করেছে উত্তরের বায়ু। হিমালয় পর্বতাঞ্চল থেকে চলে আসা শীতল বায়ু ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় সারা দেশে। মঙ্গলবার ঢাকায় বায়ুপ্রবাহ ছিল ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে ঘণ্টায়। আর বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৭ শতাংশ। বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্যও বাড়িয়ে দেয় শীতের অনুভূতি। এছাড়া আকাশে মেঘের কারণে গোটা দিন সূর্য তাপ দিতে পারেনি ধরণিকে। তাই শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও শীতের অনুভূতি অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, আবহাওয়া দপ্তর থেকে এ ব্যাপারে কোনো সুখবর নেই। আগামী দু-তিন দিন পর শীতের প্রকোপ আরও বেড়ে যেতে পারে। একটি আক্ষরিক অর্থে শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিতে পারে।

এদিকে শীতের অনুভূতি বেশি থাকায় জনজীবনে জবুথবু অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ কারণে রোগবালাই বেড়েছে। শীতজনিত নানা রোগে হাসপাতালে ভর্তি সংখ্যা বেড়েছে। শীত নিবারণ করতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে আগুন পোহাতে গিয়ে দুর্ঘটনার খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সাধারণত বয়স, বাতাসের গতি, কুয়াশার প্রকোপ, সূর্যের কিরণকাল প্রভৃতির ওপর শীতের তীব্রতা নির্ভর করে। বাতাসের গতি কম থাকলেও শীতের অনুভূতি ও প্রকোপ বেশি মনে হয়। বর্তমানে প্রকৃতিতে এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজার জেলার ওপর দিয়ে কয়েকদিন ধরে বইছে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। কয়েকদিনের কনকনে শীত ও হিমেল হাওয়ার কারণে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার তাপমাত্রা ছিল ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শিশু ও বয়স্ক মানুষ শীতের কষ্টে ভুগছেন। একদিকে জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতি, অপরদিকে শীতের কারণে কাজকর্ম কমে যাওয়ায় চরম কষ্টে ভুগছেন নিম্ন-আয়ের মানুষ। এদিকে তাপমাত্র নিম্নগামী হওয়ায় পর্যাপ্ত গরম কাপড় না থাকায় বিপাকে পড়েছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমড়সহ ১৬টি নদনদী অববাহিকার মানুষ।

কুড়িগ্রাম পৌরসভার নাজিরা খেজুরের তল এলাকার নাজমা বেগম (৩৫) আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘জিনিসপত্রের যে দাম। শীতোত মানুষটা কাজ-কামোত বেরবার পায় না। ৬ জনের সংসার চালবারে পাবার নাগছে না।’

পঞ্চগড় : শৈত্যপ্রবাহের পাশাপাশি ঘনকুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে পঞ্চগড়। মঙ্গলবার সারা দিন এখানে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এখানে সোমবার ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপামাত্রা রেকর্ড করা হয়। তাপমাত্রা বাড়লেও সূর্য না ওঠায় শীতের দাপট কমেনি। জেলা প্রশাসন এ পর্যন্ত ৪০ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে।

রাজশাহী : ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে রাজশাহীর প্রকৃতি। বেলা সাড়ে ১১টায়ও রাজশাহীতে দেখা মেলেনি সূর্যের মুখ। অফিস-আদালতে উপস্থিতি কম। ঘন কুয়াশায় সড়কে যানবাহন চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে।

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) : কয়েকদিনের মতো মঙ্গলবারও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ঘন কুয়াশার কারণে ৬ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। মঙ্গলবার ভোরে কুয়াশার তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় ফেরি কর্তৃপক্ষ। পরে সকাল পৌনে ১০টার দিকে কুয়াশার ঘনত্ব কমে গেলে পুনরায় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়।

দীর্ঘ সময় ফেরি বন্ধ থাকায় ঘাটে আটকা পড়ে কয়েকশ যানবাহন। এতে তীব্র শীত ও শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে আটকে পড়া যানবাহনের যাত্রী, চালক ও ঘাটসংশ্লিষ্টরা সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হন।

মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ) : ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় শীত জেঁকে বসেছে। টাঙ্গাইল থেকে ছেড়ে আসা প্রান্তিক সুপার বাসের চালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রচণ্ড শীত ও ঘন কুয়াশায় গাড়ি চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।