পাইলট হতে না পারলেও হয়েছেন ফুটবলের কিংবদন্তি ক্রাইম পেট্রোল ক্রাইম পেট্রোল News প্রকাশিত: ১২:১৪ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৭, ২০২৪ ৯২ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন মারিও জাগালো। ছবিঃ সংগৃহীত নিজস্ব প্রতিনিধি ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখেছিলেন বড় হয়ে পাইলট হবেন কিন্তু চোখের সমস্যার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। বাবা-মাও চাননি ছেলে ফুটবলার হোক। তাই বাণিজ্য বিভাগে পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং ফাকে ফাকে খেলতেন ফুটবল। পেশাগত জীবনও শুরু হয়েছিল সেনাসদস্য হিসেবে, কিন্তু ফুটবলার হিসেবেই বিশ্বকে নিজেকে চিনিয়েছিলেন মারিও জাগালো। সেটাও যেনতেন ভাবে নয়, সাফল্য ও গৌরব সঙ্গী করেই নিজেকে তুলে ধরেছিলেন এই কিংবদন্তি।জাগালোই প্রথম, যিনি খেলোয়াড়ের পর কোচ হিসেবেও বিশ্বকাপ জিতেছেন। ব্রাজিলের পাঁচ বিশ্বকাপের চারটিতেই সরাসরি অবদান আছে এই কিংবদন্তির। ১৯৫৮ সালে ব্রাজিলের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী দলে খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। ফাইনালে গোলও করেছিলেন। ১৯৬২ বিশ্বকাপে শিরোপা ধরে রাখা দলেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালে তাঁর কোচিংয়েই তৃতীয় বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল। তাতেই রচিত হয় নতুন ইতিহাস। বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলের এই দলকে বলা হয় অন্যতম সেরা দল। যার অংশ ছিলেন পেলে, জর্জিনহো, রিভেলিনো, তোস্তাওর মতো তারকারা। আর ১৯৯৪-এ ব্রাজিল যখন চতুর্থ বিশ্বকাপ জেতে, সেই দলটির টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ছিলেন তিনি। ব্রাজিলের ফুটবলের শক্ত ভিত এনে দেওয়ার পেছনে এই জাগালোর অবদান অনস্বীকার্য। তাই দেশটির ফুটবল ঐশ্বর্যের সঙ্গে মিশে ছিলেন ওতপ্রোতভাবে। তাঁর ব্যক্তিত্ব ও দেশ প্রেমের কারণে ব্রাজিলের সমর্থকরা তাঁকে অফুরন্ত ভালবাসত। তিনিও নিজেই বলেছিলেন, বিজয়ী হওয়ার জন্যই জন্ম হয়েছে তার। জাগালো বিশ্বাস করতেন, ১৩ নম্বর তাঁর ভাগ্য বদলে দিয়েছে। যে বিষয়টি ১৩ সম্বলিত সেটিই ছিল জাগালোর প্রিয়। তাই মাসের ১৩ তারিখে করেছিলেন বিয়ে এবং এমনকি মজা করে বলেছিলেন, ১৩ জুলাই ২০১৩তে তিনি ফুটবলকে বিদায় বলেছিলেন।ব্রাজিল জাতীয় দলে ১০ নম্বর জার্সিতে শুরু করেছিলেন জাগালো। তখনো পেলে সেভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। কিন্তু অন্তর্দৃষ্টি তাকে বলেছিল যে সে ভুল সময়ে ভুল জায়গায় ছিল। পরবর্তীতে ১০ নম্বর জার্সি নিজের করে নিয়েছিলেন পেলে। কোন এক সাক্ষাৎকারে জাগালো বলেছিলেন,’আমি দেখছিলাম যে, ব্রাজিল দলে ১০ নম্বর জার্সি পাওয়া খুব কঠিন। এই পজিশনে একাধিক তারকা ফুটবলার ছিল। তাই আমি লেফট মিডফিল্ড থেকে লেফট উইঙ্গে পজিশন পরিবর্তন করে ফেলি।’ জাগালো যখন প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন (১৯৫৮) তখন পেলের বয়স ছিল ১৭। তাই একবার মজা করে তিনি বলেছিলেন,’আমার তখন ২৭ বছর, আর পেলে ছিল ১৭ বছরের। তাই আমি বলি যে, কখনো তাঁর সঙ্গে খেলিনি কিন্তু সে আমার সঙ্গে খেলেছে।’ ১৯৭০ বিশ্বকাপের মাত্র একমাস আগে ব্রাজিলের কোচ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বিতর্কিত হোয়াও সালদানহা। তখন দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় জাগালো কাঁধে। অল্প সময় পেলেও দলকে দ্রুত এক সুতোয় গাথেন জাগালো। এরপরের গল্প তো সবারই জানা। ফাইনালে ইতালিকে ৪-১ গোলে হারিয়ে তৃতীয় বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছিল ব্রাজিল। ১৯৭৪ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ব্রাজিলের দায়িত্ব ছিলেন তিনি। সেবার অবশ্য আর জয়ের গল্প লিখতে পারেননি। জার্মানিতে হওয়া বিশ্বকাপে চতুর্থ হয় ব্রাজিল। ১৯৯৪ সালে ব্রাজিল যখন চতুর্থ বিশ্বকাপ জেতে তখন দলের সহকারী কোচ ছিলেন জাগালো। জাগালোকে সত্যিকারের বিজয়ী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন ১৯৯৪ বিশ্বকাপজয়ী ডিফেন্ডার ব্রাঙ্কো,‘প্রিয় বুড়ো নেকড়ে, সবকিছুর জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ! তুমি সত্যিকারের বিজয়ী, ব্রাজিল ফুটবলের ঐতিহ্য। তোমার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার সৌভাগ্য হয়েছে। তোমাকে চিরকাল সম্মান জানানো হবে।’ জাগালোর বিদায় মানতেই পারছেন না বিশ্বকাপজয়ী আরেক ডিফেন্ডার রিকার্দো রোচা,‘জাগালোর চলে যাওয়া, সম্ভবত আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতিগুলোর একটি। যখন ভেবেছিলাম আমার খেলোয়াড়ি জীবন শেষ হতে চলেছে, তখন সে আমার ক্যারিয়ার বাঁচিয়েছে। সে আমার ওপর আস্থা রেখেছিল।’ SHARES খেলাধুলা বিষয়: ফুটবলের কিংবদন্তিমারিও জাগালো
ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখেছিলেন বড় হয়ে পাইলট হবেন কিন্তু চোখের সমস্যার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। বাবা-মাও চাননি ছেলে ফুটবলার হোক। তাই বাণিজ্য বিভাগে পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং ফাকে ফাকে খেলতেন ফুটবল। পেশাগত জীবনও শুরু হয়েছিল সেনাসদস্য হিসেবে, কিন্তু ফুটবলার হিসেবেই বিশ্বকে নিজেকে চিনিয়েছিলেন মারিও জাগালো।
সেটাও যেনতেন ভাবে নয়, সাফল্য ও গৌরব সঙ্গী করেই নিজেকে তুলে ধরেছিলেন এই কিংবদন্তি।জাগালোই প্রথম, যিনি খেলোয়াড়ের পর কোচ হিসেবেও বিশ্বকাপ জিতেছেন। ব্রাজিলের পাঁচ বিশ্বকাপের চারটিতেই সরাসরি অবদান আছে এই কিংবদন্তির। ১৯৫৮ সালে ব্রাজিলের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী দলে খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার।
ফাইনালে গোলও করেছিলেন। ১৯৬২ বিশ্বকাপে শিরোপা ধরে রাখা দলেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালে তাঁর কোচিংয়েই তৃতীয় বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল। তাতেই রচিত হয় নতুন ইতিহাস।
বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলের এই দলকে বলা হয় অন্যতম সেরা দল। যার অংশ ছিলেন পেলে, জর্জিনহো, রিভেলিনো, তোস্তাওর মতো তারকারা। আর ১৯৯৪-এ ব্রাজিল যখন চতুর্থ বিশ্বকাপ জেতে, সেই দলটির টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ছিলেন তিনি। ব্রাজিলের ফুটবলের শক্ত ভিত এনে দেওয়ার পেছনে এই জাগালোর অবদান অনস্বীকার্য। তাই দেশটির ফুটবল ঐশ্বর্যের সঙ্গে মিশে ছিলেন ওতপ্রোতভাবে।
তাঁর ব্যক্তিত্ব ও দেশ প্রেমের কারণে ব্রাজিলের সমর্থকরা তাঁকে অফুরন্ত ভালবাসত। তিনিও নিজেই বলেছিলেন, বিজয়ী হওয়ার জন্যই জন্ম হয়েছে তার। জাগালো বিশ্বাস করতেন, ১৩ নম্বর তাঁর ভাগ্য বদলে দিয়েছে। যে বিষয়টি ১৩ সম্বলিত সেটিই ছিল জাগালোর প্রিয়। তাই মাসের ১৩ তারিখে করেছিলেন বিয়ে এবং এমনকি মজা করে বলেছিলেন, ১৩ জুলাই ২০১৩তে তিনি ফুটবলকে বিদায় বলেছিলেন।ব্রাজিল জাতীয় দলে ১০ নম্বর জার্সিতে শুরু করেছিলেন জাগালো। তখনো পেলে সেভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। কিন্তু অন্তর্দৃষ্টি তাকে বলেছিল যে সে ভুল সময়ে ভুল জায়গায় ছিল। পরবর্তীতে ১০ নম্বর জার্সি নিজের করে নিয়েছিলেন পেলে। কোন এক সাক্ষাৎকারে জাগালো বলেছিলেন,’আমি দেখছিলাম যে, ব্রাজিল দলে ১০ নম্বর জার্সি পাওয়া খুব কঠিন। এই পজিশনে একাধিক তারকা ফুটবলার ছিল। তাই আমি লেফট মিডফিল্ড থেকে লেফট উইঙ্গে পজিশন পরিবর্তন করে ফেলি।’ জাগালো যখন প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন (১৯৫৮) তখন পেলের বয়স ছিল ১৭। তাই একবার মজা করে তিনি বলেছিলেন,’আমার তখন ২৭ বছর, আর পেলে ছিল ১৭ বছরের। তাই আমি বলি যে, কখনো তাঁর সঙ্গে খেলিনি কিন্তু সে আমার সঙ্গে খেলেছে।’ ১৯৭০ বিশ্বকাপের মাত্র একমাস আগে ব্রাজিলের কোচ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বিতর্কিত হোয়াও সালদানহা। তখন দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় জাগালো কাঁধে। অল্প সময় পেলেও দলকে দ্রুত এক সুতোয় গাথেন জাগালো। এরপরের গল্প তো সবারই জানা। ফাইনালে ইতালিকে ৪-১ গোলে হারিয়ে তৃতীয় বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছিল ব্রাজিল। ১৯৭৪ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ব্রাজিলের দায়িত্ব ছিলেন তিনি। সেবার অবশ্য আর জয়ের গল্প লিখতে পারেননি। জার্মানিতে হওয়া বিশ্বকাপে চতুর্থ হয় ব্রাজিল। ১৯৯৪ সালে ব্রাজিল যখন চতুর্থ বিশ্বকাপ জেতে তখন দলের সহকারী কোচ ছিলেন জাগালো। জাগালোকে সত্যিকারের বিজয়ী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন ১৯৯৪ বিশ্বকাপজয়ী ডিফেন্ডার ব্রাঙ্কো,‘প্রিয় বুড়ো নেকড়ে, সবকিছুর জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ! তুমি সত্যিকারের বিজয়ী, ব্রাজিল ফুটবলের ঐতিহ্য। তোমার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার সৌভাগ্য হয়েছে। তোমাকে চিরকাল সম্মান জানানো হবে।’ জাগালোর বিদায় মানতেই পারছেন না বিশ্বকাপজয়ী আরেক ডিফেন্ডার রিকার্দো রোচা,‘জাগালোর চলে যাওয়া, সম্ভবত আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতিগুলোর একটি। যখন ভেবেছিলাম আমার খেলোয়াড়ি জীবন শেষ হতে চলেছে, তখন সে আমার ক্যারিয়ার বাঁচিয়েছে। সে আমার ওপর আস্থা রেখেছিল।’