ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনায় যা খেয়াল রাখবেন

প্রকাশিত: ১২:২৬ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৬, ২০২৪
পরিকল্পনা না করলে আর্থিকভাবে সফল হওয়া কঠিন।

নিজস্ব প্রতিনিধি

অর্থ বা টাকা-পয়সার ব্যবস্থাপনা ব্যক্তিজীবনের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো বয়স ও পেশার মানুষের জন্য অর্থের ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনা জানা প্রয়োজন। ব্যক্তিগত জীবনে আর্থিক পরিকল্পনা নিয়ে লিখছেন ফ্যাশন ডিজাইনার ও আইন অধিকারবিষয়ক গবেষক নিশাত আনজুম লোপা

  • পরিকল্পনা ছাড়া জীবন বৈঠা ছাড়া নৌকার মত।
ভাসবে কিন্তু লক্ষ্যে পৌছাবে না। অর্থ বা টাকা-পয়সা এমনই এক নৌকার মত। পরিকল্পনা না করলে আর্থিকভাবে সফল হওয়া কঠিন। জীবনের প্রাথমিক সময় থেকেই পরিকল্পনা করতে হবে।
নারী বা পুরুষ সবার জন্যই পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন। ৫০/৩০/২০ নামের একটি সূত্র ব্যক্তিগত আর্থিক ব্যবস্থাপনায় আলোচিত। আয়ের ৫০ ভাগ ব্যয় করুন প্রয়োজনে মাসের খরচের জন্য। ৩০ ভাগ খরচ করুন আপনার নিজের বা পরিবারের জন্য বিশেষ কোন প্রয়োজন বা চাহিদা মেটাতে।
আর ২০ ভাগ অর্থ সঞ্চয় করতে হবে।

  • নিজের আর্থিক অবস্থা জানতে ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ। কর্মজীবী হলে বেতনকে পুরো মাস ধরে ভাগ করে নিতে হবে। পরিবারের দায়িত্বে থাকলে পরিবারের ভরণপোষণের বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। শুধু আবাসন ব্যয় কিংবা বেঁচে থাকার জন্য অর্থ আয় করলে চলবে না।
সঞ্চয় করতে হবে। নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করতে হবে। জীবনযাত্রার মান ধরে রাখার জন্য ব্যক্তিভেদে আর্থিক ব্যবস্থাপনা থাকা প্রয়োজন। প্রতি মাসে আয়ের পরিমাণ ও দৈনিক খরচ ভেদে আর্থিক পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ। পরিকল্পনা থাকলে ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। জমানো অর্থ ভবিষ্যতের বিনিয়োগে কাজে যুক্ত করতে পারেন। আরেকটি জনপ্রিয় আর্থিক সূত্র ৮০/২০ নামে আলোচিত। এ নিয়মে ২০ ভাগ অর্থ ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করুন। আর বাকি ৮০ ভাগ অর্থ প্রয়োজন ও চাহিদা মেটাকে ব্যবহার করুন। কোনটা প্রয়োজন আর কোনটা চাহিদা তা বুঝতে হবে। শীতের সময় একটি জ্যাকেট কেনা আপনার প্রয়োজন। কিন্তু দামী ব্র্যান্ডের জ্যাকেট হয়তো আপনার চাহিদা। আগে প্রয়োজন মেটাতে হবে, পরে চাহিদার দিকে খেয়াল রাখবেন।

  • নিয়মিত বিনিয়োগের অভ্যাস করতে পারেন। ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য বিনিয়োগের অভ্যাস করতে হবে। আয় বুঝে সঞ্চয় করুন। সঞ্চয়ের নির্ধারিত অর্থ বিনিয়োগ করতে পারেন। শেয়ার-বাজার কিংবা যেখানেই বিনিয়োগ করুন না কেন, শিখে-বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে। ডাবল স্কিম বা লাভের ওপরে লাভ ভেল্কির পেছনে ছুটবেন না। এতে প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  • আয় বুঝে ব্যয় করো-বহু বছরের পুরোনো ভাবসম্প্রসারণ। ব্যক্তিগত খরচ ও আয়ের সঙ্গতি বুঝে পরিকল্পনা করতে হবে। আয় ১০০ টাকা, কিন্তু খরচ ১২০টাকা করলে চলবে না। সাধ্যের বাইরে খরচের অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। সঞ্চয়ের জন্য আরেকটি বিশেষ নিয়ম ৫০/১৫/৫ নামে পরিচিত। এই নিয়মে ৫০ ভাগ অর্থ মাসিক প্রয়োজনে ব্যয় করবেন। ১৫ ভাগ অর্থ অবসর জীবনের জন্য সঞ্চয় করবেন। আর ৫ ভাগ অর্থ চিকিৎসার জন্য বরাদ্ধ রাখবেন।
  • ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন অনেকেই। যেকোনো ধরণের কার্ডভিত্তিক লেনদেন বুঝেশুনে করুন। আর্থিক লিমিট বা ব্যয়ের সীমা যেন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকেন সেদিকে খেয়াল রাখুন। নির্দিষ্ট মাসের বিল নির্দিষ্ট মাসেই জমা দিন। বেশি দামের জিনিষপত্র কেনার সময় ইএমআই সুবিধা ব্যবহার করতে পারেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
  • শুধু টাকায় পয়সার হিসেব রাখলেই চলবে না। টাকা-পয়সার সঙ্গে সঙ্গে ট্যাক্স ও আর্থিক দলিলপত্র গুছিয়ে রাখার অভ্যাস করতে হবে। এখন অনেক সরকারি নিয়ম চালু আছে। ব্যক্তিপর্যায়ে ট্যাক্স দেয়ার অভ্যাস করুন। এছাড়াও কোন ধারদেনা কিংবা আর্থিক লেনদেন থাকলে তা দলিলপত্রের মাধ্যমে করার অভ্যাস করুন। হুট করে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়লে কিংবা মারা গেলে আপনার পরিবারের সদস্যদের উপর ঋণের অহেতুক চাপ তৈরি হতে পারে।
  • পরিবারের ছোট সদস্য, সন্তানদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার ধারণা দিন। সঞ্চয়ের অভ্যাস করতে শেখান। অহেতুক খরচ কিভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় সেই বিষয়টি শিশুদের শেখানোর চেষ্টা করুন। শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই সঞ্চয়ের অভ্যাসকে গুরুত্ব দিন। নিজে শিখুন, চর্চা করুন। পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও সেই বিষয়টি ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করুন।
  • খরচের সব হিসেব রাখার চেষ্টা করুন। এখন অনেক অনলাইন অ্যাপ বা প্ল্যাটফর্ম আছে। দিনের খরচ আর মাসের হিসেব সেই সব অ্যাপে লিখে রাখতে পারেন। এতে কয়েকমাস পর পর নিজের খরচের ট্রেন্ড বিশ্লেষণ করে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
  • অর্থ শুধু বেঁচে থাকার জন্য আয় করলেই চলবে না। মাসে যে অর্থ আয় করেন তার নির্দিষ্ট অংশ নিজের বিনোদন, চিকিৎসাসহ নিরাপত্তার জন্য রাখতে হবে। আবার সব অর্থ পরিবার কিংবা ব্যবসাতে খাটালে চলবে না। সবচেয়ে ভালো হয় বছরের শুরু থেকেই পরিকল্পনা করলে। আপনি আগে থেকেই জানতে পারবেন বছরে কয়টি উৎসবে আপনি কেমন ব্যয় করবেন। কেমন কেনাকাটা করবেন, বিদেশে কোন ভ্রমণ আছে কিনা, চিকিৎসার জন্য কেমন অর্থ লাগবে-এসব বিষয় কাগজে কলমে লিখে হিসেব করুন। হিসেব রাখলে সংকটে নিজের মত করে পথ তৈরি করে নেয়া যায়।
  • টাকা পয়সা নিয়মিত ধার বা লোন করে জীবনধারণ স্বাধীন জীবনের লক্ষণ না। ঋণ থাকলে তা দ্রুত পরিশোধের জন্য চেষ্টা করুন। একবারে পুরো অর্থ ঋণ হিসেবে শোধ করতে না পারলে একটু একটু করে ঋণ শোধ করুন। প্রয়োজনে ব্যাংক লোন বা স্বজনদের কাছ থেকে ধার নিতে পারেন। কিন্তু ধার পরিশোধের ক্ষেত্রে দ্রুত কাজ করার চেষ্টা করুন। আমাদের দেশে টাকা যারা ধার দেয় তাদের টাকা ফেরত পেতে অনেক ভোগান্তিতে পড়ার কথা শোনা যায়। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। নিয়মিত জীবন ধারণের জন্য ঋণ নেয়া থেকে বিরত থাকুন। হঠাৎ কোন বিপদ আপদে পড়লে যতটা কম ঋণ নেয়া যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
  • এখন অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্যবসা করেন। ব্যক্তিগত অর্থের সঙ্গে ব্যবসার অর্থ মেলাবেন না। ব্যবসার আর্থিক পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানের মত করে পরিচালনা করুন। ব্যক্তিগত অর্থ ও ব্যবসায় যে অর্থ প্রয়োজন হয় তা আলাদাভাবে ব্যবস্থাপনা করুন।