ব্যক্তিগত গাড়িতে পেশা লিখিত স্টিকার বাড়ছে অপরাধ।

প্রকাশিত: ৯:৩১ অপরাহ্ণ, জুলাই ৫, ২০২৩

শিবব্রত(বিশেষ প্রতিনিধি)
***************************************

আজকাল ঢাকাসহ জেলা, উপজেলা এমনকি গ্রামের অলিগলিতে বেশুমার ব্যক্তিগত গাড়ি দেখা যায়। , সেই সাথে গাড়ির মালিক যেমন বেশুমার তার সাথে পাল্লা দিয়ে তাদের মন মানসিকতার ধরণও বেশুমার ।যেমন এক ভদ্রলোক নতুন একটা মিরর পলিশ করা আনকোরা গাড়ি কিনে রাস্তায় কয়েকদিন ধরে চলছেন ,হঠাৎ তাঁর মনে হলো আমি এমন একটা যুৎসই গাড়িতে চড়ে যাচ্ছি ,কিন্তু ওরা কি জানে আমি কে ? না এটা ওরা কিভাবে জানবে ,আমি যদি ওদের না জানাই ।তথ্যতো আমাকে দিতেই হবে ,তবেতো ওরা জানবে ,কারণ তথ্য জানাতো পাবলিকের অধিকার ।অতএব সাদা কাগজে বড় হরফে লেখা হলো “আইনজীবি” , লেমিনেট করে দুইটা স্টিকার গাড়ির সামনে পিছ্নে দৃশ্যমান করা হলো ।এখন গাড়ি যখন রাজপথ দাবড়ে চলে একটু অন্যরকম লাগে । আরেকজন অনেকদিন থেকেই গাড়ি ব্যবহার করছেন , আইন ব্যবসায়ে আছেন অনেকদিন , তিনি দেখলেন সাড়ে আট লাখ টাকার দামী গাড়িতে সামনে পিছনে স্টিকার লাগিয়ে হাওয়া মারছে ।আমি চড়ি একুশ লাখ টাকার গাড়িতে ।বাসায় ফিরেই প্রথম কাজ স্টিকার লেখা লেমিনেট করা । ব্যস ,লেখা হয়ে গেল “সিনিয়র আইনজীবি ।
আজকাল সাংবাদিক ভাইয়েরা গাড়ি চাপার শিকারে পরিণত হচ্ছেন । গাড়ির সামনে পিছনে লেখা সাংবাদিক ,মোটরবাইকে তো অহরহ দেখা যায় । পাড়ার হোমড়া-চোমড়াও বাইকে লিখে রাখে “প্রেস” ।
এখানে একটা বড় সমস্যা, আজকাল অনেক বাস-মিনিবাস- লেগুনার চালক বর্ণ জ্ঞান সম্পন্ন নয় ।প্রেস শব্দের অর্থ চাপ দিন ভেবে যদি নির্দেশ পালন করে তাহলেই বিপদ । সরকার প্রজ্ঞাপণ জারী করেছে, “পুলিশ” স্টিকার লাগিয়ে কোন বেসরকারি গাড়ি রাস্তায় চলতে পারবেনা ।কিন্তু দেখবেন গাড়ি নিয়ে বাজার করতে গেছেন , রাস্তার উপর গাড়ি পার্ক করেছেন , কার বাবার সাধ্য আপনাকে কিছু বলে ? স্টিকার তো আছেই “পুলিশ” ।
বাচ্চা নিয়ে স্কুলে গেছে গাড়ি ,সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মার্কেটিং করবেন ,গাড়িতে লাগানো আছে স্টিকার “পুলিশ “। এভাবে আপনার চোখে পরবে , “জরুরী রপ্তানী কাজে নিয়োজিত ” লেখা গাড়ি দোকানে দোকানে আলুর চিপস নামাচ্ছে । কিছুদিন আগে এক প্রতারক ধরা পড়েছে গাড়িতে পুলিশ লিখে দিব্বি ঘুরে বেড়িয়েছে। কারো গাড়িতে লেখা দেখবেন “ডাক্তার “, কারো বা ডাক্তার লেখার দুইপাশে লাল রং দিয়ে ক্রস বা ক্রিসেন্ট চিহ্ন দেয়া । “প্রকৌশলী” স্টিকার লাগানো গাড়িও ঢাকা সহ, অনেক জেলা উপজেলার রাস্তায় দেখা যায়।
এরকম করে একসময় ব্যবসায়ি, শিল্পপতি , আর্কিটেক্ট , শিল্পোদ্দক্তা , সম্পাদক , এডিটর , শেয়ার ব্যবসায়ি , টিচার, বাড়িওয়ালা , পরিবহন ব্যবসায়ি , রাজনৈতিক নেতা ইত্যাদী লেখা স্টিকার সহ গাড়ি রাস্তায় দেখা যাওয়াটাই অস্বাভাবিক নয়।
ফেনী মহিপালের উচ্চ শিক্ষিত ফল ব্যবসায়ী আতিকুল্লাহ জানান কয়েকদিন আগে এক গাড়িতে স্টিকার দেখেছি , “বিচারক , দায়রা আদালত”। তিনি বলেন প্রশ্ন হচ্ছে এভাবে স্টিকারে নিজের পেশা জাহির করে ওরা নিজেরা রাস্তায় বাড়তি সুবিধা নিতে চাচ্ছে নাকি রাস্তায় চলাচল রত অন্য নাগরিকদের ইনস্ট্যান্ট সেবা দিতে চাচ্ছে? নাকি নিজেদের মানসিকতার দৈন্যতা প্রকাশ করছে? আসলে কোনটা?
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার অফিস সুত্রে জানা যায়, “প্রাতিষ্ঠানিক গাড়ি ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়িতে পুলিশ, প্রেস বা কোনো স্টিকার ব্যবহার করা যাবে না।”
ওই সুত্র জানায়, “আপনি পুলিশের লোক না হলেও যদি পুলিশের পোশাক পড়েন, সেটি কি বেআইনি নয়? সাংবাদিক না হয়েও সাংবাদিকের এজেন্ডা ঝোলালেন, সেটা কি বেআইনি নয়?”
রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে পুলিশ, প্রেস, সিটি করপোরেশন, আইনজীবী, ডাক্তার ইত্যাদি লেখা দেখা যায়।
ওই সুত্র আরো জানায়, “এরকম আলগা স্টিকার লাগালে হয়তো বেশিরভাগ সঠিক, কিন্তু কেউ কেউ এটির অপব্যবহারও করবে। হয়তো কোন সন্ত্রাসী এই সুযোগে এ ধরণের স্টিকার লাগিয়ে অপরাধ করবে। এটা তো আপনাদের পেশার জন্য গৌরবের হতে পারে না”
তাই কারো ব্যক্তিগত গাড়িতে এ ধরনের স্টিকার বা পরিচয় ব্যবহার না করার জন্য ওই সুত্র আহ্বান জানায়।
নাম প্রকাশ না করার বিশেষ অনুরোধে ফেনীতে কর্মরত এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “এটি তর্ক বিতর্কের বিষয় না। আমাদের উদ্দেশ্য সৎ। সন্ত্রাস দমন, মাদক ও জঙ্গি দমনের জন্য, যানজট সহনীয় করার জন্য সব পেশার মানুষকে অনুরোধ করছি, আমাদের সহযোগিতা করুন।”
কিন্তু এ ধরনের লেখার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে, তা তিনি জানাননি। অভিযোগ আছে, বেআইনি সুবিধা নিতে এ ধরনের স্টিকার লাগানো হয়।
এর আগেও এ ধরণের লেখা ব্যবহার না করতে আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ।
বিআরটি এ আইন অনুযায়ী, গাড়ির নাম্বার প্লেটে শুধুমাত্র রেজিস্টেশন নাম্বার ছাড়া অন্য কোন ধরণের লেখা নিষেধ। যদিও বাংলাদেশের মোটরসাইকেল এবং গাড়িতে এ ধরণের লেখা স্টিকার সবসময় দেখা যায়।
তবে এ ধরনের লেখা সম্বলিত যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হলেও, কয়েকদিন পরে সেসব অভিযান থেমে যায়।