জমি কেনা বেচার আগে ৫টি বিষয় জানা অতীব জরুরী।

প্রকাশিত: ৯:১১ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশে জমি কেনা-বেচা বিষয়টি সতর্কতার সাথে না করা হলে বিপত্তি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতা যেমন একটি ইস্যু, আবার নানা ধরনের জালিয়াতির শিকার হওয়ার ঘটনাও ঘটে প্রায়শই।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, তাড়াহুড়ো না করে জমি কেনার আগে কিছু বিষয় যাচাই করে নিতে পারলে প্রতারণার শিকার হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। ভূমি সংক্রান্ত কিছু সরকারি অফিসের তথ্য এবং ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করা সুপ্রিম কোর্টের দুইজন আইনজীবীর কাছ থেকে নেয়া কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো, যেগুলো জমি কেনার আগেই লক্ষ্য রাখা জরুরি।

কাগজপত্রের কপি
জমি কেনার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মালিকানার প্রমাণ সংক্রান্ত দলিল ও কাগজপত্র। যেসব কাগজপত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করতে হবে সেগুলো হচ্ছে হচ্ছে – জমির দলিল, ওয়ারিশ সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), সিএস/ এসএ/ আরএস/ মহানগর/ মিউটেশন পড়চা, ডিসিআর, খাজনার দাখিলা ইত্যাদি।

বিশেষত দলিল, মিউটেশন বা নামজারির কাগজপত্র এবং খাজনা হালনাগাদের তথ্যের দিকে প্রাথমিকভাবে জোর দেন আইনজীবীরা।

জমিভেদে সিএস, আরএস বা অন্য কাগজেরও প্রয়োজন হতে পারে, তাই যতদূর সম্ভব সেগুলো জোগাড় করা প্রয়োজন, যাতে জমি সংক্রান্ত অতীত তথ্য, বর্তমান মালিকানা, পরিমাপ ইত্যাদির নির্ভরযোগ্যতা যাচাই সম্ভব হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এএসএম সাকিব শিকদার বলেন, কাগজপত্রের বর্তমান মালিকানার বিষয় ছাড়াও ২৫ বছরের মালিকানা সংক্রান্ত তথ্যের দিকে জোর দেয়া হয়। পুরনো দলিলের সাথে পরবর্তী সময়ের নামজারির খতিয়ান মিলছে কিনা সেটা গুরুত্বপূর্ণ।

‘অনেক সময় মিউটেশনের (নামজারি) সময় আরেক জমির কিছু অংশ কাগজে চলে আসে। অথবা মামলা বা দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে মিউটেশন বাতিলের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে, এমন ক্ষেত্রে কাগজগুলো মিলিয়ে নিতে হয়।

যিনি জমি বিক্রি করছেন তিনি ক্রয়-সূত্রে নাকি উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিক হয়েছেন এ বিষয়গুলোও পরিষ্কার হতে হয়। যদি উত্তরাধিকার-সূত্রে হয় তাহলে অন্য উত্তরাধিকার আছে কিনা সেটি যাচাই করা জরুরি।

কাগজপত্র যাচাই
সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যাচাই করতে তিনটি অফিসে যেতে হবে। তহসিল বা ভূমি অফিস, এসি (ল্যান্ড) বা সহকারী ভূমি অফিস এবং সাব-রেজিস্ট্রার অফিস।

তহসিল বা ইউনিয়ন ভূমি অফিস : জমির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে তথ্য পেতে তহসিল অফিস সবার আগে গুরুত্বপূর্ণ।

খাজনার রশিদটি সঠিক কী-না, প্রস্তাবিত দাগ ও খতিয়ানের জমির প্রকৃত মালিক কে, জমিতে কোনো সরকারি স্বার্থ জড়িত আছে কিনা সেটি দেখতে হবে। এখানে সরকারি স্বার্থ বলতে খাস জমি, পরিত্যক্ত সম্পত্তি, ওয়াকফ এস্টেট এবং সরকারি অধিগ্রহণের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে হবে।

এসি ল্যান্ড অফিস – মিউটেশন বা নামজারি সংক্রান্ত তথ্য বা দ্বন্দ্বের বিষয়ে নিশ্চিত হতে যেতে হবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে। বিক্রেতার নামজারির কাগজপত্র (মিউটেশন পড়চা, ডিসিআর) ঠিকঠাক না হলে জমি রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব হবে না। তহসিল এবং এসি (ল্যান্ড), এই দুই অফিস থেকে তথ্য যাচাইয়ের দিকে বিশেষভাবে জোর দিচ্ছেন বিশিষ্ট আইনজীবীরা।

সাব-রেজিস্ট্রার অফিস– তহসিল এবং এসি ল্যান্ড অফিস ছাড়াও সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন আইনজীবীগন। সাম্প্রতিক বেচা-কেনার রেকর্ড, অর্থাৎ ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সে জমি বিক্রি সংক্রান্ত তথ্য নিশ্চিতে সাব রেজিস্ট্রার অফিসে যেতে হবে। অনেক সময় অন্যান্য সব তথ্য একই থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে একই জমি অন্য কাউকে বিক্রি করে দেয়ার মতো ঘটনা থাকতে পারে। সেজন্য সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে তথ্য নিশ্চিত করতে হবে।