উম্মতের জন্য প্রিয় নবী (সা.)-এর অনুগ্রহ যেমন ছিল

প্রকাশিত: ১:২৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিনিধি

মহান আল্লাহ প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে বিশ্ববাসীর জন্য শান্তির বাহক হিসেবে পাঠিয়েছেন। তিনি পুরো জগতবাসীর জন্য ছিলেন অনুগ্রহ ও অনুকম্পার আধার। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছি।’ (সুরা আনবিয়া, আয়াত : ১০৭)

মহানবীর অনুকম্পা ছিল সবার জন্য।

সবার জন্য তিনি ছিলেন দয়ার আধার। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, বলা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি মুশরিকদের জন্য অভিসম্পাত করুন। তখন তিনি বলেন, ‘আমাকে অভিসম্পাতকারী হিসেবে পাঠানো হয়নি। আমাকে রহমত হিসেবে পাঠানো হয়েছে।

’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৯৯)
মুমিনদের প্রতি অতি দয়ালু: পবিত্র কোরআনে মহানবী (সা.)-এর পরিচয়ে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে একজন রাসুল এসেছেন। তোমাদের যা বিপন্ন করে তা তার জন্য কষ্টদায়ক, তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ১২৮)

সবার প্রতি বিনম্র আচরণ: মহানবী (সা.) সব শ্রেণির মানুষের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত মানবিক। তাঁর আচার-ব্যবহারে মুগ্ধ ছিলেন সবাই।

পবিত্র কোরআনে তাঁর এই গুণের প্রশংসা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর অনুগ্রহে আপনি তাদের প্রতি বিনম্র হয়েছেন, আপনি তাদের প্রতি কঠোর অন্তরের হলে তারা আপনার কাছ থেকে সরে পড়ত। অতএব আপনি তাদের ক্ষমা করুন, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন…।’ সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)
অন্য হাদিসে এসেছে, আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের কাছে তাঁর নিজের অনেক নাম বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি মুহাম্মদ, আহমদ, আল-মুকাফফি (সর্বশেষ), আল-হাশির (সমবেতকারী), তাওবার নবী ও রহমতের নবী।

’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩৫৫)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে মানুষ, আমি রহমত ও উপহার।’ (দারেমি, হাদিস : ১৫)

শত্রুর জন্য দয়া: ইসলামের প্রথমযুগে মহানবী (সা.) মুশরিকদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। তখন পাহাড়ের দায়িত্বশীল ফেরেশতা এসে বলল, হে মুহাম্মদ, আপনাকে আপনার জাতি যা বলেছে মহান আল্লাহ তা শুনেছেন। আমার রব আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন, যেন আপনি আপনার ইচ্ছানুসারে নির্দেশ প্রদান করেন। আপনি চাইলে, আমি আপনি প্রসিদ্ধ ‘আখশাবাইন’ নামের (মক্কার আবু কুবায়েস ও কুআইকাআন) পাহাড় দুটি তাদের ওপর চাপিয়ে দেব। জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বরং আমি আশা করি, আল্লাহ তাদের ঔরসে এমন সন্তান জন্ম দেবেন, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৩২৩১)

চিরস্থায়ী শান্তির জন্য উদগ্রীব: মহানবী (সা.) নিজের পরিচিতদের প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র ছিলেন। আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, এক ইহুদি দাস রাসুল (সা.)-এর সেবা করতেন। সে অসুস্থ হয়ে পড়লে রাসুল (সা.) তাঁকে দেখতে যান। তার শিয়রে বসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে বালক, আপনি ইসলাম গ্রহণ করুন।’ তখন পাশে থাকা তার বাবার দিকে ফিরে তাকায়। তার বাবা তাকে বলল, তুমি আবুল কাসেমকে অনুসরণ কোরো। অতঃপর সে ইসলাম গ্রহণ করে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সব প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য যাকে তিনি আগুন থেকে রক্ষা করেছেন।’ (বুখারি, হাদিস : ১৩৫৬)

আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ লাভ: মহানবী (সা.) নিজে যেমন দয়ার সাগর ছিলেন, তেমনি অন্যদেরও দয়া ও অনুকম্পা ধারণে উপদেশ দেন। এ ক্ষেত্রে শত্রু-মিত্র, ধনী-গরিব, শক্তিশালী-দুর্বল সবাই তাঁর কাছে সমান ছিলেন। জারির বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে মানুষের ওপর অনুগ্রহ করে না, মহান আল্লাহ তার ওপর অনুগ্রহ করেন না।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৩৭৬)

আরেক হাদিসে এসেছে, ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ অনুগ্রহকারীদের ওপর অনুগ্রহ করেন। তোমরা জমিনে যারা রয়েছে তাদের ওপর অনুগ্রহ কোরো। যিনি আসমানে রয়েছেন তিনি তোমাদের অনুগ্রহ করবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪১)

কন্যাসন্তানের প্রতি দয়া: প্রাচীন যুগে আরবসহ বিভিন্ন অঞ্চলে কন্যাসন্তানদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করা হতো। অথচ রাসুল (সা.) কন্যাসন্তানের পিতার জন্য বিশেষ সুসংবাদ দিয়েছেন। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের কারো তিন কন্যা বা বোন থাকলে সে তাদের প্রতি সদাচরণ করলে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯১২)

অনাথ, বিধবা ও অসহায়দের প্রতি দয়া: রাসুল (সা.) সব সময় এতিম ও বিধবাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ছিলেন। তাদের সহযোগিতার ব্যাপারে বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, নিজের বা অন্য কারো এতিম সন্তানের তত্ত্বাবধানকারী ও আমি জান্নাতে দুই আঙুলের মতো দূরত্বে থাকব। বর্ণনাকারী বলেছেন, রাসুল (সা.) বৃদ্ধ ও মধ্যমা আঙুলের ইঙ্গিত করেন। (মুসলিম, হাদিস : ২৯৮৩)

অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দয়া: অসুস্থ ব্যক্তির শুশ্রূষাকারীর জন্য মহানবী (সা.) দোয়া করেছেন। আলী বিন আবু তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি সন্ধ্যায় কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে সকালবেলা দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য ইস্তিগফার করতে থাকেন। তার জন্য জান্নাতে একটি অংশ রয়েছে। আর কেউ সকালবেলা গেলে সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দোয়া করতে থাকেন। তার জন্য জান্নাতে একটি অংশ থাকে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩০৯৮)

প্রাণীদের প্রতি দয়া: প্রাণীর প্রতি দয়ার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় খুবই পিপাসিত হয়। সে কূপে নেমে পানি পান করে সেখান থেকে বের হয়। এরপর সে একটি কুকুরকে পিপাসায় কাতর হয়ে মাটি খেতে দেখে। লোকটি ভাবল, কুকুরটি পিপাসায় কাতর হয়ে আমার মতো পরিস্থিতি হয়েছে। অতঃপর সে কূপে নেমে কুকুরকে পানি পান করাল। আর মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসুল, পশুপাখিদের উপকার করলে কি আমাদের সওয়াব রয়েছে? তিনি বলেছেন, ‘যেকোনো প্রাণীর উপকার করলে সওয়াব রয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩৬৩)