প্রাংক ভিডিও’ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে ক্রাইম পেট্রোল ক্রাইম পেট্রোল News প্রকাশিত: ৮:৫৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৬, ২০২৩ সংগৃহীত ছবি নিজস্ব প্রতিবেদক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিতি লাভ এবং তা থেকে বেশি উপার্জন করতে কিছু মানুষ প্রাংক ভিডিও (মজার ভিডিও) তৈরি করে। সাধারণত এই ধরনের ভিডিও তৈরি করা হয় নিছক মজা করার জন্য। কিন্তু মজা করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই বিপত্তি ঘটে। কোনো ধরনের বিপত্তি না ঘটলে এটি তৈরি করতে গিয়ে অনেক সময় মানুষকে মজার ছলে হয়রানি করা হয়, যা হয়রানির শিকার ব্যক্তি কিংবা সেখানে থাকা অন্যান্য মানুষ স্বাভাবিকভাবে নেয়। তা ছাড়া ঈমান বা জ্ঞান বৃদ্ধিতেও এ ধরনের ভিডিও কোনো ভূমিকা রাখে না। মুসলমানের জন্য কি এ ধরনের ভিডিও বানানো ও দেখা জায়েজ? আজকে সেই প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ। মানুষের সম্মানহানি নিষিদ্ধ : প্রথমত, প্রাংক ভিডিও তৈরি করার সময় যাকে টার্গেট করে ভিডিওটি বানানো হয় অনেক ক্ষেত্রে তার অনুমতি নেওয়া হয় না। যদি কারো অনুমতি না নিয়ে তার সঙ্গে প্রাংক করা হয়, তবে তা তাকে হয়রানি করার শামিল। সে পরিচিত হোক বা অপরিচিত হোক, এতে কষ্ট পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। এমনকি এতে সে অপমানবোধও করতে পারে, যেহেতু এ ধরনের ভিডিও ধারণ করা হয়। জনসমাগমে ইসলামের দৃষ্টিতে এভাবে কাউকে হয়রানি করা এবং কারো সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলা নিষেধ। এর জন্য কিয়ামতের দিন ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা বেশি। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য ক্রয় করে এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, তাদের জন্য আছে অবমাননাকর শাস্তি।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ৬) তা ছাড়া রাষ্ট্রীয় আইনেও কারো অনুমতি ছাড়া তাকে হেনস্তা করার জন্য তার ছবি-ভিডিও ধারণ করা দণ্ডনীয়। গণমাধ্যমের তথ্য মতে, ‘কোনো ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত বা জ্ঞাতসারে অন্য কোনো ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তার ব্যক্তিগত ছবি তুলে প্রকাশ করলে বা বিকৃত করলে বা ধারণ করলে তা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।’ যদি অনুমতি নেওয়াও হয়, তাও এটা কোনো সচেতন মুমিনের কাজ নয়। পবিত্র কোরআনে এ ধরনের অনর্থক কাজকে মূর্খদের কাজ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর স্মরণ করো, যখন মুসা তার গোত্রকে বলল, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে তোমরা একটি গাভি জবাই করবে। তারা বলল, তুমি কি আমাদের সঙ্গে উপহাস করছ? সে বলল, আমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৬৭) অযথা সময় নষ্ট : প্রাংক ভিডিও তৈরি করা এক ধরনের অনর্থক কাজ। মজা করতে গিয়ে এখানে অন্যকে ঠাট্টা করা হয়, অনর্থক অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি করা হয়। নবীজি (সা.) এ ধরনের কাজ পছন্দ করতেন না। আয়েশা (রা.) বলেন, কোনো একসময় মহানবী (সা.)-কে আমি জনৈক ব্যক্তির চালচলন নকল করে দেখালাম। তিনি বলেন, আমাকে এই পরিমাণ সম্পদ প্রদান করা হলেও কারো চালচলন নকল করা আমাকে আনন্দ দেয় না। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! সাফিয়্যা তো বামন নারী লোক, এই বলে তিনি তা হাতের ইশারায় দেখালেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি এমন একটি কথার দ্বারা বিদ্রুপ করেছ, তা সাগরের পানির সঙ্গে মেশালেও ওই পানিকে দূষিত করে ফেলত। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫০২) বিপদ হওয়ার সম্ভাবনা : এ ধরনের ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে অনেক সময় ভিডিও ধারণকারীদের জনরোষের শিকার হতে হয়। অনেক সময় বড় ধরনের বিপদেও পড়তে হয়। ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এপ্রিল মাসেও ভার্জিনিয়ার একটি শপিং মলে অপরিচিত লোককে টার্গেট করে মজার দৃশ্যের ভিডিও তৈরি করতে কুক নামক এক কনটেন্ট ক্রিয়েটর গুলিবিদ্ধ হন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের নিজ হাতে নিজেকে বিপদের দিকে ঠেলে দিতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো এবং স্বহস্তে নিজেদের ধ্বংসে নিক্ষেপ কোরো না এবং কল্যাণকর কাজ করে যাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ কল্যাণকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৯৫) শিশুদের ওপর প্রভাব : অনেক সময় শিশুরা হাতে মোবাইল পেলে এ ধরনের ভিডিও দেখে মজা পায়, যা তাদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাদের মধ্যে এ ধরনের অনর্থক কাজের প্রবণতা বাড়তে পারে। মজার ছলে তারা না বুঝে অনেক দুর্ঘটনাও ঘটিয়ে ফেলতে পারে, যা অনর্থক কাজে পথপ্রদর্শনের শামিল। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা : আবার কখনো অপরাধীরা প্রাংক করার ছলে সত্যি সত্যিই কোনো দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। আশপাশের মানুষ হয়তো প্রাংক ভেবে বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করতেও এগিয়ে আসবে না। বোঝা গেল, এটি মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এ ধরনের ভিডিও তৈরি ও দেখা থেকে নিজেকে বিরত রাখাই মুসলমানের জন্য উপকারী ও নিরাপদ। SHARES ইসলাম বিষয়: ইসলামপ্রাংক ভিডিও
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিতি লাভ এবং তা থেকে বেশি উপার্জন করতে কিছু মানুষ প্রাংক ভিডিও (মজার ভিডিও) তৈরি করে। সাধারণত এই ধরনের ভিডিও তৈরি করা হয় নিছক মজা করার জন্য। কিন্তু মজা করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই বিপত্তি ঘটে। কোনো ধরনের বিপত্তি না ঘটলে এটি তৈরি করতে গিয়ে অনেক সময় মানুষকে মজার ছলে হয়রানি করা হয়, যা হয়রানির শিকার ব্যক্তি কিংবা সেখানে থাকা অন্যান্য মানুষ স্বাভাবিকভাবে নেয়।
তা ছাড়া ঈমান বা জ্ঞান বৃদ্ধিতেও এ ধরনের ভিডিও কোনো ভূমিকা রাখে না। মুসলমানের জন্য কি এ ধরনের ভিডিও বানানো ও দেখা জায়েজ? আজকে সেই প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ। মানুষের সম্মানহানি নিষিদ্ধ : প্রথমত, প্রাংক ভিডিও তৈরি করার সময় যাকে টার্গেট করে ভিডিওটি বানানো হয় অনেক ক্ষেত্রে তার অনুমতি নেওয়া হয় না। যদি কারো অনুমতি না নিয়ে তার সঙ্গে প্রাংক করা হয়, তবে তা তাকে হয়রানি করার শামিল।
সে পরিচিত হোক বা অপরিচিত হোক, এতে কষ্ট পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। এমনকি এতে সে অপমানবোধও করতে পারে, যেহেতু এ ধরনের ভিডিও ধারণ করা হয়। জনসমাগমে ইসলামের দৃষ্টিতে এভাবে কাউকে হয়রানি করা এবং কারো সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলা নিষেধ। এর জন্য কিয়ামতের দিন ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য ক্রয় করে এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, তাদের জন্য আছে অবমাননাকর শাস্তি।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ৬) তা ছাড়া রাষ্ট্রীয় আইনেও কারো অনুমতি ছাড়া তাকে হেনস্তা করার জন্য তার ছবি-ভিডিও ধারণ করা দণ্ডনীয়। গণমাধ্যমের তথ্য মতে, ‘কোনো ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত বা জ্ঞাতসারে অন্য কোনো ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তার ব্যক্তিগত ছবি তুলে প্রকাশ করলে বা বিকৃত করলে বা ধারণ করলে তা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।’ যদি অনুমতি নেওয়াও হয়, তাও এটা কোনো সচেতন মুমিনের কাজ নয়। পবিত্র কোরআনে এ ধরনের অনর্থক কাজকে মূর্খদের কাজ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর স্মরণ করো, যখন মুসা তার গোত্রকে বলল, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে তোমরা একটি গাভি জবাই করবে। তারা বলল, তুমি কি আমাদের সঙ্গে উপহাস করছ? সে বলল, আমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৬৭) অযথা সময় নষ্ট : প্রাংক ভিডিও তৈরি করা এক ধরনের অনর্থক কাজ। মজা করতে গিয়ে এখানে অন্যকে ঠাট্টা করা হয়, অনর্থক অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি করা হয়। নবীজি (সা.) এ ধরনের কাজ পছন্দ করতেন না। আয়েশা (রা.) বলেন, কোনো একসময় মহানবী (সা.)-কে আমি জনৈক ব্যক্তির চালচলন নকল করে দেখালাম। তিনি বলেন, আমাকে এই পরিমাণ সম্পদ প্রদান করা হলেও কারো চালচলন নকল করা আমাকে আনন্দ দেয় না। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! সাফিয়্যা তো বামন নারী লোক, এই বলে তিনি তা হাতের ইশারায় দেখালেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি এমন একটি কথার দ্বারা বিদ্রুপ করেছ, তা সাগরের পানির সঙ্গে মেশালেও ওই পানিকে দূষিত করে ফেলত। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫০২) বিপদ হওয়ার সম্ভাবনা : এ ধরনের ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে অনেক সময় ভিডিও ধারণকারীদের জনরোষের শিকার হতে হয়। অনেক সময় বড় ধরনের বিপদেও পড়তে হয়। ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এপ্রিল মাসেও ভার্জিনিয়ার একটি শপিং মলে অপরিচিত লোককে টার্গেট করে মজার দৃশ্যের ভিডিও তৈরি করতে কুক নামক এক কনটেন্ট ক্রিয়েটর গুলিবিদ্ধ হন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের নিজ হাতে নিজেকে বিপদের দিকে ঠেলে দিতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো এবং স্বহস্তে নিজেদের ধ্বংসে নিক্ষেপ কোরো না এবং কল্যাণকর কাজ করে যাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ কল্যাণকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৯৫) শিশুদের ওপর প্রভাব : অনেক সময় শিশুরা হাতে মোবাইল পেলে এ ধরনের ভিডিও দেখে মজা পায়, যা তাদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাদের মধ্যে এ ধরনের অনর্থক কাজের প্রবণতা বাড়তে পারে। মজার ছলে তারা না বুঝে অনেক দুর্ঘটনাও ঘটিয়ে ফেলতে পারে, যা অনর্থক কাজে পথপ্রদর্শনের শামিল। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা : আবার কখনো অপরাধীরা প্রাংক করার ছলে সত্যি সত্যিই কোনো দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। আশপাশের মানুষ হয়তো প্রাংক ভেবে বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করতেও এগিয়ে আসবে না। বোঝা গেল, এটি মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এ ধরনের ভিডিও তৈরি ও দেখা থেকে নিজেকে বিরত রাখাই মুসলমানের জন্য উপকারী ও নিরাপদ।