সুযোগ লুফে নেওয়ার ম্যাচ বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ১০:২১ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৪, ২০২৩
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের কৌশল নিয়ে হয়তো কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহের সঙ্গে আলোচনা করছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
নিজস্ব প্রতিবেদন

দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে একে একে পরিবেশিত হতে থাকা তথ্যগুলো আগে মন দিয়ে শুনলেন সাকিব আল হাসান। এরপর একগাল হেসে বললেন, ‘দোয়া করেন, কালকে টসটা যেন জিতি!’ প্রচণ্ড গরম এবং সেই সঙ্গে আর্দ্রতার মধ্যে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টস খুব গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কথা নয়। তবু প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা বলেই বাংলাদেশ অধিনায়ক ভাগ্য পরীক্ষায় জিততে মরিয়া। কারণ প্রোটিয়াদের আগে ব্যাটিং করা ও রান তাড়ার মধ্যে বিস্তর ফারাক।

শেষ ১৫ বারের মধ্যে হারের অনুপাতই বেশি। এই আসরেও আছে তারই ধারাবাহিকতা। চার ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে আগে ব্যাটিং করে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেওয়া প্রোটিয়াদের নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেই শুধু রান তাড়া করতে হয়। সেই ম্যাচেই ঘটে অঘটন।
আজ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামেও তাদের রান তাড়ার চ্যালেঞ্জ দিয়ে চাপে ফেলার লক্ষ্য আছে বলেই টস ভাগ্যে হাসতে চান সাকিব। ধর্মশালায় ডাচরা যে ফর্মুলায় জিতেছিল, তাতেও এই অলরাউন্ডারকে মনে হলো ভীষণ আস্থাশীল, ‘নেদারল্যান্ডস তাদের অল্প রানে আটকে ফেলেছে। ওখান থেকে অনেক কিছু নেওয়ার চেষ্টা করব। (দক্ষিণ আফ্রিকার) শেষ এক-দেড় বছরের পারফরম্যান্স নিয়েই পরিকল্পনা করা হবে। পরিকল্পনা তো থাকেই, কিন্তু সব সময় সফল হয় না।

আশা করছি কাল (আজ) আমাদের ভালো দিন যাবে এবং পরিকল্পনা সফল হবে।’ 

যদিও পরিকল্পনার বাস্তবায়ন এখন পর্যন্ত ভণ্ডুলই করে দিয়ে আসছেন ব্যাটাররা। কাল সন্ধ্যায় এই প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে আসা সাকিবের মুখের হাসিও তেমন চওড়া হওয়ার কথা ছিল না টানা তিন হারের পর। কিন্তু তাঁকে দেখাল যথেষ্ট হাসিখুশিই। কারণ বুঝে নিতে অবশ্য সমস্যা হয়নি। এত দিনে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্নের রং চটে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি বেশ সজীবই দেখছেন সাকিব। তাতে অন্য দলগুলোর অবদানই বেশি থাকায় বাংলাদেশ অধিনায়ক হাসতে হাসতেই বলছিলেন, ‘স্বপ্ন (পূরণ) এখনো সম্ভব। যদিও আমরা খুব বেশি ম্যাচ জিতিনি। এটি সত্যি কথা যে পয়েন্ট টেবিল দেখলে মনে হবে না আমরা খুব বাজে অবস্থায় আছি। অন্যান্য দল আমাদের সাহায্য করছে। এখন আমাদের দায়িত্ব নিজেদের সাহায্য করা।’

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডই যেমন বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে। অন্যরা যে সুযোগ দিয়েছে, তা লুফে নেওয়ার লড়াইতেই আজ সাকিবদের নেমে পড়তে হচ্ছে। এক ম্যাচ পর অধিনায়ককেও আবার মাঠের নেতৃত্বে পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদ যদিও টানা দ্বিতীয় ম্যাচে খেলতে পারছেন না। দুই ম্যাচের বিশ্রাম দিয়ে তাঁকে শেষ চার ম্যাচে পেতে চায় দল। গত সন্ধ্যার অনুশীলন অবশ্য সাকিবকে নিয়ে যাবতীয় দুশ্চিন্তা তাড়ানোর মতোই ছিল। ব্যাটিং তো করেছেনই, সবচেয়ে জরুরি হয়ে ওঠা রানিংয়ের পরও তাঁকে অস্বস্তিতে ভুগতে দেখা যায়নি। বোলিংও করেছেন অল্পবিস্তর।

এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাও কাল দুপুরের অনুশীলনে ব্যাটিং করেছেন লম্বা সময়। সুস্থ হয়ে মাঠে ফেরার অপেক্ষা তাঁরও। ডাচদের কাছে হার বাদ দিলে এই আসরে তাঁর দলের ব্যাটিং ঝলসেই চলেছে। অবশ্য নেদারল্যান্ডস ম্যাচ ছাপিয়ে প্রোটিয়া ব্যাটার এইডেন মারক্রামের মনে পড়ে গেল বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁদের পূর্ব অভিজ্ঞতাও, ‘বাংলাদেশের বিপক্ষে আমরা যখন যেখানেই খেলি না কেন, সেটি আমাদের কাছে বিশাল ম্যাচের মর্যাদাই পায়। কারণ অতীতে এই দলটির বিপক্ষে খুব ভালো আমরা করিনি। এটি আবার ইংল্যান্ড ম্যাচের মতো পারফরম করার ক্ষেত্রে আমাদের অনুপ্রেরণাও।’ বিশ্বকাপে এর আগে চারবারের দেখায় দুই দলই আছে ২-২ এর সমতায়। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে তখনকার ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ের এক নম্বর দল প্রোটিয়াদের হারিয়ে হৈচৈ ফেলে দেওয়া বাংলাদেশ আরেকবার তাদের হারের তিক্ত স্বাদ দিয়েছে ২০১৯-এর আসরে। দুই দলের সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজও বাংলাদেশ জিতেছে ২-১-এ।

একই ব্যবধানে অবশ্য ভারতকেও গত ডিসেম্বরে দেশের মাটিতে হারিয়েছিল তারা। কিন্তু বিশ্বকাপে উল্টো উড়েও গেছে। আজ একাদশে নাসুমের জায়গা নিয়ে ফেরার অপেক্ষায় থাকা সাকিব আবার মনে করেন, প্রোটিয়াদের ছন্দে থাকাও তাদের জেতার নিশ্চয়তা নয়, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা চার ম্যাচের মধ্যে তিনটি জিতেছে ঠিক। ওরা অনেক ভালো অবস্থায়ও আছে। এর মানে এই নয় যে (আমাদের) সব শেষ। পাঁচ ম্যাচ এখনো বাকি। এই ম্যাচ জিততে পারলে আমরা ভালো মোমেন্টামও পাব।’

এই ম্যাচ জিতলে এবার নিজেদেরও সাহায্য করা হবে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের!