সৌর বিদ্যুতে মিলবে সংকটের সার্বিক সমাধান।

প্রকাশিত: ৮:৪৪ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩

“বিশ্ব পরিবেশ ও জ্বালানি সংকটে সমূহ দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় নবায়নযোগ্য উৎস। পৃথিবীর প্রতিটি দেশ এখন সেদিকেই ঝুঁকছে। বাংলাদেশও অন্তত ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে এ পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু প্রভাবশালী তেল-গ্যাস লবির দৌরাত্ম্যে সে ক্ষেত্রে সাফল্য এসেছে সামান্যই। সরকারের গত ১৪ বছরের প্রচেষ্টায় আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এখন ২২ হাজার মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে, যা বাস্তবায়নাধীন বড় কেন্দ্রগুলোসহ ৩০ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছাবে। তবে বিশ্ব জ্বালানিযুদ্ধের বাস্তবতায় নির্মাণাধীন গ্যাসভিত্তিক প্রকল্পগুলোর ‘সিওডি’ আমাদের অবশ্যই অন্তত দুই বছর পিছিয়ে দিতে হবে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, ১৫ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হলে বিদ্যমান বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কি কাজে লাগবে? বস্তুত, আগামী তিন বছরে ঘণ্টায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট গড়ে আমাদের দৈনিক মোট বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা দাঁড়াবে ৩ লাখ ৬০ হাজার মেগাওয়াট-ঘণ্টা। আমরা এতক্ষণ সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে দিনের বেলার- সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত- শুধু ৬০ হাজার মেগাওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুতের প্রয়োজন মেটানোর হিসাব করেছি, যা মোট প্রাক্কলিত চাহিদার মাত্র ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। অবশিষ্ট ৩ লাখ মেগাওয়াট-ঘণ্টা আসবে বিদ্যমান ও বাস্তবায়নাধীন জীবাশ্মনির্ভর ও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে।
যেসব ক্যাপটিভ, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এতদিন আমাদের প্রয়োজন মিটিয়েছে, সেগুলোসহ অতিমাত্রায় জ্বালানি খরচের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে আমাদের এ সুযোগে অবশ্যই সসম্মানে অবসরে পাঠাতে হবে। তাতে আমাদের কার্যকর সক্ষমতা দাঁড়াবে ২০ হাজার মেগাওয়াট। এর প্রতিটিই আয়ুস্কাল পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১৫ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। সে ক্ষেত্রে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে অভ্যন্তরীণ গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো এবং নিজস্ব কয়লা উত্তোলনে কার্যকর উদ্যোগ অপরিহার্য। বাসাবাড়ি ও যানবাহনে মূল্যবান প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিবর্তে অবিলম্বে ‘এলপিজি’ কিংবা ‘ইলেকট্রিক’ বিকল্পে যেতে হবে। ভবিষ্যতে তেল-গ্যাস-কয়লানির্ভর আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রও স্থাপন করা যাবে না এবং মেয়াদ শেষে বিদ্যমান একটি চুক্তিও নবায়ন করা হবে না। নতুন সব প্রকল্পই হতে হবে নবায়নযোগ্য, গ্রিন হাইড্রোজেন কিংবা নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রযুক্তির। ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা আমাদের অর্জন করতেই হবে।
উপস্থাপিত প্রস্তাব অনুসারে, ১৫ বিলিয়ন ডলার এফডিআইর মাধ্যমে ১৫ গিগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হলে দেশের চলমান সব সমস্যার ‘সার্বিক সমাধান’ ঘটবে।
একদিকে এফডিআই আমাদের রিজার্ভ বাড়াবে এবং অন্যদিকে জ্বালানি আমদানি কমে গেলে বর্তমান রিজার্ভের ক্ষয়ও রহিত হবে। শিল্প খাতে পর্যাপ্ত গ্যাস দেওয়া গেলে ব্যাপক কর্মসংস্থানসহ রপ্তানি আয়েও বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি ঘটবে। সেই সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে আমদানি বিকল্প শিল্প গড়ে তোলা হলে আমদানি খরচও উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। সার কারখানায় প্রয়োজনীয় গ্যাস ও সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা গেলে কৃষি ক্ষেত্রে সার ও সেচ সুবিধা নিশ্চিত হবে, তাতে বাড়বে খাদ্য উৎপাদন, কমে যাবে খাদ্য আমদানিও। সোলার ফার্মগুলোতে মৎস্য কিংবা সবজি-ফলমূল চাষ বাধ্যতামূলক করা হলে দেশে খাদ্য উৎপাদনে বিপুল অগ্রগতি হবে, যা নিশ্চিত করবে ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’র সার্বিক খাদ্যনিরাপত্তা। সর্বোপরি এ উদ্যোগের ফলে পরিবেশ রক্ষায় বাংলাদেশ তার ‘নেট জিরো’ অঙ্গীকারে অন্য সব দেশের চেয়ে বহুদূর এগিয়ে যাবে। সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং হবে ‘সবুজ বাংলাদেশ’ হিসেবে।
মোজাম্মেল বাবু: প্রকৌশলী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব(এমডি ৭১’টেলিভিশন)