সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক প্রতিনিয়তই ঘনিষ্ঠ হচ্ছে : যুবরাজ

প্রকাশিত: ২:৫১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিনিধি

সৌদি আরবের যুবরাজ বলেছেন, ‘ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আমরা প্রতিনিয়তই কাছাকাছি যাচ্ছি।’ ফক্স নিউজের সঙ্গে বিরল সাক্ষাৎকারে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান জোর দিয়ে বলেছেন, ফিলিস্তিন ইস্যুটি এখনো মার্কিন মধ্যস্থতায় আলোচনার একটি ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ’ অংশ। দুই শক্তির মধ্যে কোনো চুক্তি একটি বিশাল আঞ্চলিক পরিবর্তন চিহ্নিত করবে।

এদিকে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলেছে, ইসরায়েলি ও মার্কিন কর্মকর্তারা আলোচনা প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন, যার মাধ্যমে রিয়াদকে প্রকাশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে দেখা যাবে।

সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম পারমাণবিক চুল্লি, যেমন জ্বালানি তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে, তেমনি পারমাণবিক অস্ত্রও তৈরি করা যাবে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় প্রকাশ্যে এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে নেতানিয়াহু আগে মধ্যপ্রাচ্যের পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন।

নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এক ফাঁকে নেতানিয়াহু ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈঠকের পরপরই ফক্স নিউজের সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়।

ইসরায়েল ও সৌদি আরব প্রথমবারের মতো কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে—এমন একটি অগ্রগতির সম্ভাবনা সম্পর্কে তারা ইতিবাচকভাবে কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশেরই ঘনিষ্ঠ মিত্র।ইসরায়েলের একটি সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিউ ইয়র্কে বৈঠকে ‘অধিকাংশই ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি প্রতিষ্ঠার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যা আরব-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে পারে’।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন পরে বলেছেন, আগামী বছরের প্রথম দিকে একটি কাঠামো চুক্তি হতে পারে।

ইসরায়েলের আর্মি রেডিওকে কোহেন বলেন, ‘শূন্যতা পূরণ করা যেতে পারে। এতে সময় লাগবে। তবে অগ্রগতি আছে।’অধিকাংশ আরবদেশের মতো, সৌদি আরব ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে। তবে গত বছরের শেষের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র একটি অগ্রগতি আনার চেষ্টা করছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যস্থতায় তথাকথিত আব্রাহাম চুক্তিতে ২০২০ সালে ইসরায়েল সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে স্বাভাবিক করার বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করে।ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিনিময়ে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বড় সামরিক সহায়তা, নিজস্ব বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা ও ফিলিস্তিনিদের জন্য উল্লেখযোগ্য ইসরায়েলি ছাড় চায়। তবে ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদী সরকারের অধীনে এ ছাড় অর্জন করা অত্যন্ত কঠিন হবে।

যুবরাজ ফক্স নিউজের সংবাদদাতা ব্রেট বেয়ারকে ইংরেজিতে বলেছেন, ‘আমাদের জন্য, ফিলিস্তিন ইস্যুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সেই অংশটি সমাধান করতে হবে।’ তিনি আরো মন্তব্য করেছেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের একটি ভালো আলোচনার কৌশল রয়েছে।’

এ মাসের শুরুতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নেতারা যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও ইসরায়েল জড়িত একটি সম্ভাব্য চুক্তির জন্য তাদের দাবিগুলো রাখার জন্য রিয়াদে সৌদি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। বিবিসি জানতে পেরেছে, এর মধ্যে রয়েছে শত শত মিলিয়ন ডলারের নগদ অর্থ বৃদ্ধি ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে জমির আরো নিয়ন্ত্রণ।

নেতানিয়াহুর কট্টরপন্থী সরকারের সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে সাক্ষাৎকারের সময় প্রশ্ন করা হলে যুবরাজ মোহাম্মদ বলেন, ‘যদি আমাদের একটি অগ্রগতি হয়, এমন একটি চুক্তিতে পৌঁছনো যায়, যা ফিলিস্তিনিদের তাদের চাহিদা দেয় ও এই অঞ্চলকে শান্ত করে, সেখানে আমাদের যে কারো সঙ্গে কাজ করতে হবে।’

ইসরায়েলের বর্তমান শাসক জোটের অনেক সদস্য ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিরোধের অবসান ঘটাতে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত ধারণার দৃঢ়ভাবে বিরোধী। নিউ ইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার আগে তার নিজের ডানপন্থী লিকুদ পার্টির ১১ আইন প্রণেতা একটি যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, তারা সৌদি আরবের সঙ্গে শান্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনিদের জমি দেওয়ার প্রচেষ্টাকে বাধা দেবে।

যুবরাজের সঙ্গে ফক্স নিউজের সাক্ষাৎকারে সৌদি পরমাণু পরিকল্পনার কথাও উঠে এসেছে। তার দেশের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সৌদি নেতা বলেন, ‘যেকোনো দেশ পারমাণবিক অস্ত্র পাওয়ার বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’ তিনি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, ইরান যদি পারমাণবিক বোমা তৈরি করে, তাহলে সৌদি আরবকেও ‘শক্তির ভারসাম্য রক্ষায় নিরাপত্তার কারণে’ সে পথ অনুসরণ করতে হবে।

সূত্র : বিবিসি